ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, যে রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়টির গৌরবের তিলক, সেই রাজনীতি তাকে কলঙ্কিতও কম করেনি। আদর্শিক রাজনীতি থেকে সরে এসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণেই বদনামের ভাগীদার হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে রাজনীতি সচেতনরা দেশের গুণগত পরিবর্তন আনবে বলে আশা তাদের।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ,গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সব জায়গাতেই ঢা:বি নেতৃত্ব। জাতির নেতৃত্বও ঢা:বি থেকে আসা। কিন্তু খুনোখুনিও কম হয়নি। ৯০’এর পর থেকে ২০১০ সালে নিহত মেধাবী আবু বকর সিদ্দিক পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনকে হতে হয়েছে ‘ছাত্র রাজনীতির’ বলি। আবার শিক্ষক রাজনীতির নামে দলীয় এজেন্ডা আর নিয়োগ বাণিজ্যে কলঙ্কিত হয়েছে ক্যাম্পাস, শিক্ষার মান নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মনে করেন, ঢা:বি তার প্রতিষ্ঠাকালীন বৈশিষ্ট হারিয়েছে। শুরুতে ছিলো আবাসিক ব্যবস্থা, টিউটোরিয়াল সিস্টেম এবং শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা পত্রিকা প্রকাশ, শিল্প সাহিত্য চর্চা এবং খেলাধূলা করতো। সেসব এখন আর আগের মতো নেই।
চ্যানেল আই অনলাইনকে দেশ বরেণ্য এই অধ্যাপক বলেন, ‘এক সময় জগন্নাথ হলে নাটক দেখতে নগরবাসীর ভীড় জমতো,শহীদুল্লাহ হলের বিতর্কে যোগ দিতেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা’। মাত্রাতিরিক্ত আসন সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সংখ্যা। তাই আদর্শ সমুন্নত রাখা যায়নি বলেই মনে করেন তিনি। এজন্য শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন,‘ঢা:বি শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সময় তৎকালীন পাকিস্তানে সেনা শাসনের বিরোধীতা করেছিলেন তিনি। আর এখন শিক্ষদের এরকম অবস্থান চোখে পড়ে না বললেই চলে।’
দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা এবং নিয়োগ বাণিজ্য শিক্ষক রাজনীতিকেও বদলে দিয়েছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ অধ্যাপক। তবে এতো সীমাবদ্ধতার মাঝেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও বিশ্বকে অনেক কিছুই দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গত জানুয়ারিতে ঢা:বি’র ৪৯ তম সমাবর্তনে ছাত্ররাজনীতির আদর্শচ্যুতি নিয়ে আক্ষেপ করেছিলেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আচার্যের কথার সুত্রে ধরে উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ছাত্ররাজনীতির অতীতের ধারা ম্লান হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘এখন আর ছাত্ররা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে আসে না। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপরাজনীতিতে ছাত্ররাজনীতি বিপথে গিয়েছে।’
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে ডাকসু নির্বাচনের দরকার আছে বলেও মনে করেন তিনি। তবে ডাকসু ছাড়াও ছাত্র-শিক্ষকরা এক এগারোর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
শতকরা ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ডাকসু চায় উল্লেখ করে ঢা:বি’র একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ক্লাস-পরীক্ষার সময়সূচির মতো ডাকসু নির্বাচনের দিন-ক্ষণ লিপিবদ্ধ থাকা উচিৎ বলে মনে করেন সাবেক ডাকসু ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বলেন, ‘ঢা:বি রাজনীতির আদর্শচ্যুতির বিষয়টি আংশিক সত্য। তবে এর মাঝেও লিটন নন্দীর মতো অনেকেই যৌন নিপীড়নসহ নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন।’
৯৪ বছরের ঢা:বি নতুন প্রজন্মের হাত ধরে রাজনীতি সচেতন এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উচ্চ শিক্ষা-গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করেন এই তিন ব্যক্তিত্ব।