শ্রেণিকক্ষে জেন্ডার বিষয়ক লেকচারে ‘আপত্তিকর চিত্র’ ব্যবহারের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিয়াজুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অথচ ওই বিভাগের আরো কিছু শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা তাতে আপত্তিকর কিছু দেখছেন না। ব্যবহৃত চিত্রকে প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তা নিয়ে আপত্তি তোলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তারা। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ‘জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট’ কোর্সে পাঠদানের সময় ব্যবহার করা যে চিত্রগুলোকে ‘শালীনতা বর্জিত’ হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে সেই কনটেন্টগুলো দেখে এ বিষয়ে আপত্তি তোলা নিয়েই উল্টো প্রশ্ন তুলেছেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞরা। জেন্ডার বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, ‘যে কনটেন্টগুলো নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে আমি সেগুলো পুরোটা দেখেছি। বিষয়গুলো খুবই প্রাসঙ্গিক এবং কোর্সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, ‘মেডিকেল সায়েন্সের মতো জেন্ডার স্টাডিজে অনেক প্রাসঙ্গিক চিত্র ব্যবহার করার প্রয়োজন, যা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠা বিস্ময়কর।’ বিশেষজ্ঞদের এই মতামতের বাইরে আরও দু’টি আশংকার জন্ম দিয়েছে এই অধ্যাপকের বরখাস্ত হওয়ার ঘটনায়। প্রথমটি হচ্ছে, তাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বরখাস্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে একজন সিন্ডিকেট সদস্য জানান, সিন্ডিকেট চাইলে যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত না করে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে বা পদে বহাল রেখেও তদন্ত করা যায়। এখানে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার নিয়মটি লঙ্ঘিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই রকম অবিবেচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের সাধারণ আইন-কানুন ও প্রথার বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি প্রভাব রাখে। সে দৃষ্টিতে এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষক রিয়াজুল হক তার একটি কোর্সে যদি কোন আপত্তিকর ছবি ব্যবহারও করে থাকেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে প্রথমে মৌখিকভাবে সতর্ক করতে পারত। তদন্তসাপেক্ষে তার বিচারও করা যেত। এটি না করে তার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তাতে সবাই অন্য কারণ খুঁজছেন। আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি: এরকম একটি স্পর্শকাতর বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নানাভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যার ফলে এই অধ্যাপকের জীবন সংশয়ে পড়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সাময়িক বরখাস্তের খবরটি কোন সংবাদমাধ্যমে ‘অতিরঞ্জিতভাবে’ প্রকাশ হওয়ায় তা নিয়ে জনমনে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। ‘অশ্লীল চিত্র’ প্রদর্শনের খবরে উগ্রবাদীদের অনেক পেজ ও ব্লগে তাকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। এতে তিনি ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিরাপত্তা শঙ্কায় তিনি বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। এটি একজন সাধারণ নাগরিকের জন্যও অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এ ঘটনার কারণে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। কোনো অঘটনের দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট এই ঘটনার বিভ্রান্তি নিরসন ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি। ঘটনার পেছনে যদি কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, আমরা সেই প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবিও করছি।