এক সভায় পরস্পরের মধ্যে ‘হাতাহাতি’ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের শিক্ষকদের দুই পক্ষ একদিন আগে পরে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছেন। ওই ঘটনায় ‘অনুতপ্ত’ না হয়ে এবার তারা প্রতিবাদের নামে জনসম্মুখে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। ঘটনার দায় নিয়ে পরষ্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছেন। ‘হাতাহাতি’র ঘটনা হয়েছিল অনেকটাই লোকচক্ষুর অগোচরে। রোববার ও সোমবারের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মাধ্যমে তারা প্রকাশ্যে এসে নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান ‘দলাদলি’র বিষয়টি সবাইকে আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াবেন, পড়বেন, গবেষণা করবেন, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করবেন, জ্ঞান চর্চা করবেন, জ্ঞানের সাধনায় সবসময় নিমগ্ন থাকবেন, সেই শিক্ষকরাই আজ ‘পদ-পদবি’র জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। শিক্ষকদের এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা এমন আচরণ প্রত্যাশা করি না। অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষরা যেখানে গবেষণায় ব্যস্ত, নতুন-নতুন জ্ঞান, তত্ত্ব ও চিন্তার উদ্ভাবন করে সুনাম কুড়াচ্ছেন, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অপরাজেয় বাংলার সামনে মাইক নিয়ে পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন।গবেষণা ও গবেষকদের সংখ্যা দিনের পর দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব সৃষ্টির অন্যতম প্রধান এই কারণ কোন শিক্ষকই এড়াতে পারেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন সফল ব্যবসায়ী, সফল রাজনীতিবিদ কিন্তু সফল শিক্ষক হতে পারছেন না কেউ। চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গবেষণার জন্য। এ নিয়ে শিক্ষকদের কোন কর্মসূচি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে শিক্ষকদের এই সংকীর্ণ লেজুড়বৃত্তি, টেলিভিশন টক-শোতে রাজনৈতিক তোষণ, এনজিওগুলোতে অর্থ বাণিজ্যসহ যাবতীয় ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা বাদ দিয়ে ছাত্রদের পড়ানো ও গবেষণায় মনোযোগ দেয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর শিক্ষকদের কাজ হবে নতুন-নতুন জ্ঞান ও চিন্তার মাধ্যমে সত্যকে অনুসন্ধান করা, শিক্ষার আলো দিয়ে জাতির যাবতীয় অন্ধকার দূর করা, নিজেদেরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করা তাদের কাজ নয়। সবার মধ্যে সুবোধ জাগ্রত হোক।