ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলসহ চারটি দাবি জানানো হয়।
তাদের দাবিগুলো হলো ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল করা, পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পূর্বে অভিযুক্ত জালিয়াতদের ভর্তি বাতিল করা।
দুপুর সোয়া বারটায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা কর্মীরা ‘ঘ’ ইউনিটের ফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।
এর আগে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্যে দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। এর আগে তিনি ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলসহ চারটি দাবিতে অনশনরত আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র দুটি গৌরব অবশিষ্ট আছে। সবচেয়ে বড় অহংকারটা হলো আমরা ভর্তি পরীক্ষাটা ঠিক মতো গ্রহণ করি। অনেক ক্ষেত্রে আমারে অনেক অবক্ষয় হয়েছে , কিন্তু একটা জিনিস আমরা গর্ব করে বলতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাটা সুচারুভাবে হয়। আজকে সেখানে আঘাত লেগেছে। আমাদের সবার প্রতিবাদ করা উচিত।
তিনি বলেন, অবশ্যই ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল করা উচিত ছিল। আমরা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘ ইউনিটের রেজাল্ট যারা গ্রহণ করে নেয় তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা যায় এই স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে যে পরোক্ষভাবে হলেও সবাইকে জানান দিয়ে দিবে এখানে দুর্নীতিবাজ, যারা কারচুপি করে, প্রশ্নফাঁসের ব্যবসা করে ভর্তি হওয়া জায়েজ? অনশনরত আখতার এই প্রশ্নটি সবার কাছে তুলে ধরেছে।
‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তার কথায় কর্ণপাত না করে তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে তারা প্রশ্নফাঁসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অনশনরত আখতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতটা অমানুষ,অসংবেদনশীল, অনাচারী হয়ে সেটা অনুধাবন করে কাঁদছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেটার প্রতিবাদে একটা ছেলে বসে আছে আমরা কেউ তাকে দেখতে আসছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দায়িত্ব অনুধাবন করছে না, এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটির প্রতিটা ছাত্রের দেখাশোনা করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। আমরা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি। আখতারের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ঘ ইউনিটে পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি একজন ভর্তিচ্ছুর মোবাইলে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ পায়।
প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা বাতিল না করে মঙ্গলবার ফল প্রকাশ করে। এই দিন দুপুর সাড়ে বারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন ঘ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করে।