ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগে পছন্দের ছাত্রীকে ভবিষ্যতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে অন্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল অবমূল্যায়নের অভিযোগ করেছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগের তীর বিভাগের চেয়ারম্যান সাবরিনা শাহনাজের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ করেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তা খানম বলেন: আমরা এ বিষয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। উপাচার্য বিভাগে এ বিষয়ে চিঠি পাঠালেও বিভাগ কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
‘যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর কোনো সমাধান করতে না পারে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে যাবো।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই বিভাগের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তা খানম।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এমএফএ প্রথম পর্বের ফলাফল প্রকাশ হলে তারা দেখেন যে সুমাইয়া ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল জিপিএ ৩.৫০ এর নিচে। ঢাবির নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে সিজিপিএ ৩.৫০ এর নীচে কোনো শিক্ষার্থী আবেদনের অযোগ্য বলে গণ্য হন।
তাই তারা মনে করেন, সুমাইয়া ইসলামকে ভবিষ্যতে বিভাগের শিক্ষক পদে অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে নিয়োগ প্রদান করার জন্যই বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে মেধার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
কারণ হিসেবে তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, পূর্বের পরীক্ষাগুলোর ফলাফল যদি তারা দেখে, বেশ কিছু শিক্ষার্থী তার চেয়ে ভালো ফলাফল করে আসছে। ফলাফল বোর্ডের প্রথম স্থান সুমাইয়া ইসলামের জিপিএ ৩.৭৭ এবং তার সাথে বিশাল ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানধারীর জিপিএ ৩.৪৭।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তাদের ক্ষেত্রে মাত্র ৯জন শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রস্তুত করতে সময় নেয়া হয় ৯২ দিন। এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করলে তিনি বার বার এড়িয়ে যান।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, পরীক্ষা কমিটির অন্যতম সদস্য সহকারী অধ্যাপক সঞ্চয় চক্রবর্তী এবং বিভাগীয় অন্যান্য শিক্ষকের অমতেই খেয়াল-খুশিমতো এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে পরীক্ষার নম্বর পত্র দেখানো নিয়ম থাকলেও তা শিক্ষার্থীর দেখানো হয়নি।
বিভাগের একাডেমিক কমিটির অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও বিভাগের চেয়ারম্যান তার সুবিধানুযায়ী আরেকজন বিতর্কিত শিক্ষককে নিয়ে তাদের এম.এফ.এ দ্বিতীয় পর্বের চূড়ান্ত পরীক্ষার কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষায় আবারও অবমূল্যায়নের ষড়যন্ত্রের শিকার হবার আশঙ্কা করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হল- এমএফএ ১ম পর্বের ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে; ফলাফল পুনর্মূল্যায়নে উক্ত শিক্ষকদের কোন ভূমিকা থাকবে না; এমএফএ দ্বিতীয় পর্ব তথা মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষার কমিটি বাতিল করতে হবে; এমএফএ দ্বিতীয় পর্বের কোন কোর্সে উক্ত শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা থাকবে না।
এ বিষয় জানতে চাইলে ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় চক্রবর্তী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফলাফলের স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য একটি কমিটি করার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে বিভাগের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। আমিও ওই কমিটির সদস্য।
‘কিন্তু ফলাফল প্রকাশে আমাদের অবজ্ঞা করা হয়। বিভাগের সেমিনার পেপার দেখার জন্য কমিটির একটি মিটিং হওয়ার নিয়ম। কিন্তু বিভাগের চেয়ারম্যান এবং কমিটির প্রধান কোনো মিটিং কল করেননি। পরবর্তীতে আমরা সব শিক্ষক এটার বিরুদ্ধে আপত্তি জানালেও তিনি আমাদের অবহিত না করে এবং আমার সাক্ষর ছাড়াই দ্রুত ফলাফল দিয়ে দেন। পরবর্তীতে আমি বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন মহলে জানাই।’
বিষয়টি জানতে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান সাবরিনা শাহনাজকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।