‘কার্বন ফ্রি’ ক্যাম্পাস বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ থেকে শুরু হলো জোবাইক সার্ভিস ‘ডিইউ চক্কর’ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
বুধবার দুপুর তিনটার দিকে টিএসসির পায়রা চত্বরে ‘ডিইউ চক্কর’ এর শুভ উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ডিইউ চক্কর’ নামে এই সেবাটি ইতোমধ্যেই গত ৭ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে এবং ডাকসুর সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে ১০০টি সাইকেল নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে আজ শুরু হলো সেটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী নওফেল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধার জন্য জোবাইক সার্ভিস চালু হয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। জোবাইক একটি পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।
ছাত্রনেতাদের দায়িত্বশীল ও শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, নেতা হওয়ার পরই ছাত্রদের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে- নেতৃত্ব ভোগের বিষয় নয়, এটি একটি দায়িত্ব। এ দায়িত্ব নেয়ার পর জীবনযাত্রা ভিন্ন হওয়া যাবে না, সাধারণ ছাত্রদের মতো হতে হবে। তা না হলে সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব হবে না। সরকার প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বরাদ্দ দেয়; সততা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রশাসনকে বিভিন্ন অনুপাতে সঠিক বন্টনে খরচ করতে উৎসাহিত করতে হবে। এটিই হলো প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দর, নিয়ন্ত্রিত ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জোবাইক পরিচালিত হবে। পরিবেশ বান্ধব এই ব্যবস্থা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে । হয়ে উঠবে বিজ্ঞানমনস্ক। প্রযুক্তিকে সময় অনুযায়ী ব্যবহারের অভ্যেস তৈরি হবে।
নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ক্যাম্পাসে জোবাইক সার্ভিস চালু করতে পারায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ডাকসুর ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক শামস-ই নোমান।
‘উই ওয়ান্ট কার্বন ফ্রি ক্যাম্পাস’ স্লোগানকে সামনে রেখে নোমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অ্যাপ ভিত্তিক বাইসাইকেল সেবা (চক্কর) চালু করা করা ছিলো ডাকসু নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। এখন এর বাস্তবায়নের কৃতিত্ব আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কেননা তাদের কারণেই এটি আজ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জোবাইকের ১০০টি বাইক নিয়ে সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে ডাকসু ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে ডাকসু ও হল সংসদ এর নেতৃত্ববৃন্দ ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই সেবা ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছেন ডাকসুর পরিবহন সম্পাদক শামস-ই নোমান।
শিক্ষার্থীরা তাদের বৈধ আইডি কার্ড দেখিয়ে নিবন্ধিত হওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের ভেতরে এই সেবা নিতে পারবেন বলে জানান তিনি। বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও নিবন্ধন করে এই সেবা নিতে পারবেন।
“শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক সাড়া পেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরা যত দ্রুত সম্ভব সাইকেলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেব। নভেম্বরের মধ্যেই আরও ৫০টি এবং ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৩০০টি সাইকেল দেওয়ার প্ল্যান আমাদের আছে”, জানিয়েছেন ডাকসুর এই সম্পাদক।
অনুষ্ঠানে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ডাকসুর যদি ধারাবাহিকতা থাকে তাহলে আরও ভাল উপহার দেওয়া যাবে।
এসময় আবাসন সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে শিক্ষা উপমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন ডাকসু ভিপি।
জোবাইক সেবা যাতায়াত ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে একযোগে কাজ করার জন্য নুরকে আহ্বান জানান রাব্বানী।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চতুর্থ এবং দেশের ষষ্ঠ জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জোবাইক সার্ভিস সেবা চালু হচ্ছে।
ডাকসু সদস্য তিলোত্তমা শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, জোবাইক এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মেহেদী রেজা, ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আরিফ ইবনে আলী, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ডাকসুর সদস্য চিবল সাংমা, রাইসা নাসের, রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তিলোত্তমা শিকদার, ফরিদা পারভীন, মোঃ সাইফুল ইসলাম রাসেল, তানভীর হাসান সৈকত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন ও হল সংসদ এর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ববৃন্দ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।
যেভাবে চলবে জোবাইক
জোবাইকের স্মার্ট সাইকেলের সঙ্গে থাকবে অত্যাধুনিক লক, সোলার প্যানেল, জিপিএস ইত্যাদি। এই সাইকেলের লক খোলার জন্য দরকার হবে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। অ্যাপের মাধ্যমে সাইকেলের সঙ্গে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে সাইকেলটি ব্যবহার করা যাবে। আর চক্কর সেবা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য।
অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যান করে সাইকেলের লক খোলার সঙ্গে শুরু হবে সময় গণনা। গন্তব্যে পৌঁছে ব্যবহারকারী যখন সাইকেলটি স্ট্যান্ড করে পুনরায় লক করবেন তখন শেষ হবে তার রাইড।
সাইকেলটি ব্যবহারের জন্য অন্যান্য স্থানে প্রতি মিনিটে এক টাকা করে গুনতে হলেও ঢাবি শিক্ষার্থীদের গুণতে হবে প্রতি পাঁচ মিনিটে দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সা। রাইডের মূল্য পরিশোধ করতে সাইকেল স্ট্যান্ডের কাছে একটি রিচার্জ সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে ব্যবহারকারীরা জোবাইকের অ্যাপে রিচার্জ করতে পারবেন। আর সেই অ্যাকাউন্ট থেকেই রাইডের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি আবাসিক হল, কার্জন হল, কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে বাইসাইকেলের স্ট্যান্ড থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগণ এ সেবা নিতে পারবেন। ডাকসু এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করবে।