দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারা দেশের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া। আর মাত্র দুইদিন পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা-৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত দেশ সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নৌকার পক্ষে ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হবে প্রচারণার সময়সীমা। নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও প্রচারণায় দেখা যায়নি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে।
প্রচারণার পাশাপাশি ক্যাম্পাস এলাকায় কোনভাবেই যাতে ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারে বিশ্বাস করে না’-এমন কোনো রাজনৈতিক দল বা তাদের ছাত্র সংগঠন নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাতদিন বিরামহীন শো-ডাউন ও বিভিন্ন কর্মসূচি করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিএসসি’র পায়রা চত্বরে ‘প্রগতির মঞ্চে বিজয়ের স্বরলিপি’ নামে একটি মঞ্চ তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সেখানে তারুণ্যের ভাবনা, মুক্ত আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোক উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এটি ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’ ব্যানারে করা হচ্ছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ‘নৌকার’ প্রার্থীর ব্যাপক প্রচার থাকলেও ‘ধানের শীষের’ প্রার্থীর বা তাদের ছাত্র সংগঠনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। ছাত্রদলের অভিযোগ তারা প্রচারণা করতে যেয়ে ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হয়েছে।
ছাত্রদলের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি সবারই প্রচারণার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা চাই না স্বাধীনতা বিরোধীদের চর্চা স্বাধীনতার মহান চেতনা এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হোক। ছাত্রদল যদি জামায়াত বা শিবিরকে ছেড়ে এই ক্যাম্পাসে প্রচারণা করতে আসে তাহলে আমরা তাদের কখনও বাধা দিতাম না, কখনো দিবোও না। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার যে অভিযোগ তারা করেছে সেটা মিথ্যা, ভিত্তিহীন।
প্রচরণায় জনগণের নিকট কেমন সারা পেয়েছেন জানতে চাইলে সনজিত বলেন, আমাদের ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন। তিনি একজন প্রবীণ নেতা। উনার যে ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, তার শিক্ষার গভীরতা রয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে প্রতিটি মহল্লায় গিয়েছি, প্রত্যেকটি কোয়ার্টারে গিয়েছি। প্রত্যেক জায়গায় আমরা নৌকার পক্ষে গণজোয়ার দেখেছি। আমরা আশাবাদী তিনি ঢাকা-৮ আসনের এমপি হিসেবে নির্বাচিত হবেন এবং মন্ত্রী পরিষদ গঠন করবে আওয়ামী লীগ।
‘‘আমরা ৩১ আগস্ট মনোনীত হওয়ার পর থেকেই নৌকার বিজয়ের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য যত ধরনের মানবিক কার্যক্রম, স্বচ্ছ কার্যক্রম করা যায় জাতির পিতার আদর্শের ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা তা করার চেষ্টা করেছি। জনগনের রায় আমাদের পক্ষেই যাবে। আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন সনজিত।
ক্যাম্পাসে নিজেদের সরব উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সনজিত বলেন, আমরা সবসময় আশংকায় ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ক্যাম্পাসে হানা দিতে পারে। তাদের মূল লক্ষ্য বুদ্ধিভিত্তিক আক্রমণ। দেশের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ তাদের ষড়যন্ত্রের ছক হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কোন শক্তি যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আস্তানা গড়তে না পারে সেজন্য আমরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা টিএসসিতে পাঁচ দিনের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন। আমরা আশাবাদী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে জনগণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বয়কট করবে।
অপরদিকে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তবে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ করা হলে চ্যানেল আই অনলাইনকে তারা বলেন, আমরা ভোটের মাঠে প্রচারের জন্য নামতে পারছিনা। ক্যাম্পাসের কোন স্থানে পোস্টার লাগাতে গেলেও ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে চলে আসতে হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখলেও মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে ছাত্রলীগ। নানাভাবে হয়রানি করে মামলা হামলার ফলে আমরা ভোটের মাঠে নামতে পারছিনা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে এবার মোট ভোটার দুই লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা এই নির্বাচনী আসনের অন্তর্ভুক্ত৷
রমনা, মতিঝিল ও পল্টন নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে মহাজোটের মনোনয়নে ‘নৌকা’ প্রতীকে লড়ছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন৷ এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে লড়ছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস৷