বাংলাদেশের দুজন তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতা লুবনা শারমিন ও আবিদ মল্লিক এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। তারা উৎসবে যাচ্ছেন ‘ঢাকা টু কান’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে। কান উৎসবকে নিয়ে বাংলাদেশে এ ধরনের কার্যক্রম এই প্রথম। ইন্টারন্যাশনাল এমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফটা) সহায়তায় ‘ঢাকা টু কান’ কার্যক্রম আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অফ বাংলাদেশ (আইএফআইবি)।
এই দুই নির্মাতা কান চলচ্চিত্র উৎসবে এক নতুন যাত্রা শুরু করছে এবং মার্শে দ্যু ফিল্মের আয়োজিত প্রডিউসারস ওয়াকর্শপে অংশ নিচ্ছে। উৎসবে এবং মার্শে দ্যু ফিল্মে অংশগ্রহনকারী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতের ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হওয়ার বিশেষ সুযোগ পাচ্ছেন নির্মাতারা। এই উৎসবে অংশ নিতে প্রতি বছর বিশ্বের চলচ্চিত্র পরিচালক, পরিবেশক আর প্রযোজকেরা ছুটে আসেন।
এই ওয়ার্কশপে, বিশিষ্ট নির্মাতা, চলচ্চিত্র কর্মকর্তা আর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তিন দিনব্যাপী আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে নির্মাণের গ্রহণযোগ্য কর্মপদ্ধতি ও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো নির্ধারনের চেষ্টা করা হবে এবং সেই সাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে টেকসই হবার জন্য শিল্প ও বানিজ্যের কিধরনের ধারা গ্রহন করা যায় তাও দেখা হবে।
আইএফআইবির ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের কয়েকজন নবীন প্রতিশ্রুতশীল নির্মাতা আবেদনের পর একটি আন্তর্জাতিক জুরি লুবনা শারমিন ও আবিদ মল্লিককে বাছাই করে। জুরি সদস্য ছিলেন, লেখক–পরিচালক–প্রযোজক মেরী ম্যাকগুচিয়ান, বিনোদন জনসংযোগকারী গ্যারি স্প্রিংগার এবং পরিচালক–প্রযোজক অ্যালান পল।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে আইএফটা কানের প্লাজ রয়্যালে ‘ঢাকা টু কান’ ‘সেলিব্রেশন অব ট্যালেন্ট’ শিরোনামে সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানে ‘ঢাকা টু কান’–এর এই আয়োজনে অংশগ্রহনকারীদের অভ্যর্থনা জানানো হবে।
আইএফআইবির প্রেসিডেন্ট সামিয়া জামান এবং আইএফটার প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড সদস্য মার্কো অরসিনিসহ বাংলাদেশের নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ড. জাকির হোসেন রাজু (আইএফআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট), আহমেদ মুজতবা জামাল শোভন, আবু সায়ীদ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
মার্কো অরসিনি বলেছেন, আইএফটার জন্য ‘ঢাকা টু কান’ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতের কাছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আরো পরিচিত করা এবং সেই সাথে কানে বাংলাদেশের নির্মাতাদের অংশগ্রহনের সুযোগ ব্যপ্ত করা। আমরা বাংলাদেশের নির্মাতাদের বিশ্বায়িত চলচ্চিত্র বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চাই।
বিশ্বের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব অতি গুরত্বপূর্ণ মিলনমেলা। এখানে সিনেমা শিল্পের পাশাপাশি এর বাণিজ্যিক দিকটি অর্থাৎ ফিল্ম কেনাবেচা, পরিবেশনা—এগুলো উৎসবের অংশ।
সামিয়া জামান বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে উৎসবে অংশ নেওয়ার পর, আমি ভীষণভাবে মনে করি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের প্রত্যেকেরই কান ও সেই সাথে অন্যান্য চলচ্চিত্র উৎসবগুলো একটু ঘুরে দেখা উচিত।’
বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনের কাছে পৌঁছানোর জন্য নিরবিচ্ছিন্ন, ধারাবাহিক এবং পরিকল্পিত উপস্থিতি খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
লুবনা শারমিন এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবং প্রডিউসারস ওয়ার্কশপে অংশ নিতে পেরে খুবই উত্তেজিত এবং গর্বিত। তিনি মনে করেন একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে সফল হতে এবং নেটওয়ার্কিং স্কিলসহ কিছু বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অজর্নে সাহায্য করবে।
লুবনা বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পে সৃস্টিশীলতার সংগে কারিগরি জ্ঞানের সংযোগ হয়। আরো বেশী করে এই ধরনের কার্যক্রমে অংশ নিলে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প উপকৃত হবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এভাবে উৎসাহিত করতে এই যৌথ উদ্যোগের জন্য আইএফটা এবং আইএফআইবি দুজনকেই ধন্যবাদ।’
ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশের (আইএফআইবি) উদ্দেশ্য, শিল্পবোধ এবং বিষয় নির্বাচনে মানোত্তীর্ণ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে আরও পরিচিত করা। বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসব, নির্বাচক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সমালোচক এবাং জাতীয়-আন্তর্জাতিক শিল্প, সংস্কৃতি এবং চলচ্চিত্র সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আইএফআইবি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্ব মঞ্চে পরিচিত করাতে চায়।
অন্যদিকে ইউরোপের মোনাকোর অলাভজনক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইএফটার লক্ষ্য হলো, বিশ্বের নতুন সিনেমা প্রতিভাকে আবিষ্কার ও তাকে পরিচিত করানো, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পারস্পরিক মত বিনিময়কে উৎসাহিত করা এবং চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির জন্য কাজ করা।