ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধি কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহেমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর-উস-সাদিক।
এর আগে ঢাকা ওয়াসার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ২২(১) ও ২২(৩) ধারার বলে পানির প্রকৃত উৎপাদন ও বিতরণ ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূলের সামঞ্জস্য বিধান এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধিজনিত খরচ সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদনক্রমে প্রতি এক হাজার লিটার পানির অভিকর (দাম) আবাসিকে ১১ টাকা ৫৭ পয়সার স্থলে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা ৪ পয়সার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলো। সংশোধিত অভিকর (দাম) ওই আইনের ২৩ ধারা অনুসারে ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
ওয়াসার এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে ভার্চুয়াল হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। রিটে স্থানীয় সেবা বিভাগের সচিব, আইনসচিব ও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়। রিটের যুক্তি তুলে ধরে আইনজীবী তানভীর আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করে। আবার এবছর প্রায় ২৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। অর্থাৎ এক অর্থবছরেই দুইবার মূল্য বাড়ানো হল। অথচ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ২২ (২) ধারা অনুসারে দাম (অভিকর বা চার্জ) প্রতি অর্থবছরে মাত্র একবার অনধিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো কথা। এই অর্থবছরেই দুইবার মূল্য বৃদ্ধি বিষয়টিসহ যথাযথভাবে ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করার দিকগুলো তুলে ধরে রিটটি করা হয়।’
রিটের শুনানি নিয়ে গত ২২ জুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির ওপর ১০ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ওয়াসা। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো.নূরুজ্জামানের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালত হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা ১৬ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। ওই আদেশের ফলে ঢাকা ওয়াসার পানির বর্ধিত মূল্য কার্যকরে আইনী বাধা কাটে।
তবে রিটটি আবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহেমেদ। আদালত সোমবার এই রিটের শুনানি নিয়ে ঢাকা ওয়াসার পানির বাড়তি দামের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন।
আদালত তার রুলে, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ এর ২২(৩) ধারা অনুযায়ী পানির দাম বাড়িয়ে জারি করা অফিস আদেশ কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ এর ২২(৩) ধারাটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা, জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, আইন সচিব, ঢাকা ওয়াসা, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।