ছবিটি গত ২৮ জানুয়ারির। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তখন ফোনে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আর ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠরা। সাত মাস পর সেই ছবিটি দিয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের টালমাটাল অবস্থা তুলে ধরেছে বিবিসি। ট্রাম্প কীভাবে ঘনিষ্ঠ মহলশূন্য হয়ে পড়ছেন, তারই এক উপস্থাপন রয়েছে তাতে।
এ বছরের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন ট্রাম্প। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন, পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বা বহিষ্কৃত হয়েছেন। ছবিটিতে থাকা ৬ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন এখনও স্বপদে বহাল। এই দুইজনের একজন অবশ্য প্রেসিডেন্ট নিজেই, যার অভিশংসনের দাবি প্রায়ই গণমাধ্যমে জায়গা পাচ্ছে।
সর্বশেষ ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক কৌশলবিষয়ক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন বহিষ্কৃত হলেন। আর এতে ঘনিষ্ঠদের চলে যাওয়ার পাল্লা আরো ভারী হলো। দেখে নেয়া যাক ট্রাম্প এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা এখন কোথায় আছেন?
১. প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকার পরও এখনও তিনিই প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত ট্রাম্পের অবস্থান দুর্বল করছে। এছাড়া ওবামাকেয়ার বাতিল এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো বিষয়গলোতেও তিনি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন।
এছাড়াও সম্প্রতি ভার্জিনিয়ার শার্লোটসভিলে শেতাঙ্গ কর্তৃত্ববাদীদের সাথে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ট্রাম্পের মন্তব্যও বিতর্কের মুখে পড়েছে। জ্যেষ্ঠ ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের সমালোচনায় সামিল হয়েছেন।
২. রেইন্স প্রিবাস, চিফ অব স্টাফ
হোয়াইট হাউসে কয়েক সপ্তাহের তপ্ত পরিস্থিতির পর রেইন্স প্রিবাসকে বহিষ্কার করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের মাত্র ছয় মাসের মাথায় জুলাইয়ে তিনি বিদায় নেন। নতুন (এবং এখন সাবেক) যোগাযোগ পরিচালক অ্যান্থনি স্কারামুকি এর কয়েকদিন আগে প্রিবাসকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলেছিলেন, অভ্যন্তরীণ বিষয় ফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার ওই মন্তব্য। সাবেক রিপাবলিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস চিফের পরিবর্তে চিফ অব স্টাফ হন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জন কেলি।
৩. মাইক পেন্স, ভাইস প্রেসিডেন্ট
পেন্স এখনও ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। এই ছবির একমাত্র ব্যক্তি (ট্রাম্প ছাড়া) হিসেবে প্রথম সাতটি মাস তিনি অতিবাহিত করতে পারলেন। কিন্তু আগস্টের শুরুতে তাকে নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি, যা জোরালোভাবে অস্বীকার করেন পেন্স।
৪. স্টিভ ব্যানন, প্রধান রাজনৈতিক কৌশলবিদ
সর্বশেষ বিদায় নিয়েছেন স্টিভ ব্যানন। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দর্শনকে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে এই গোল্ডম্যান ব্যাংকার ব্যাননের বড় ভূমিকা ছিল। ট্রাম্পের জয়ের অন্যতম কারিগর বলেও মনে করা হয় ব্যাননকে। কিন্তু স্পষ্টতই হোয়াইট হাউসের মধ্যপন্থী অংশের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স শুক্রবার জানান, তার পদ ছেড়ে চলে যাওয়া পারস্পরিক সম্মতিতেই হয়েছে। কিন্তু এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের মন্তব্যেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ব্যানন তার পদ হারাচ্ছেন।
৫. সিন স্পাইসার, প্রেস সেক্রেটারি
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে উত্তপ্ত আচরণের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি স্পাইসার। জুলাইয়ের শেষ দিকে তাকেও পদত্যাগ করতে হয়। যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে অ্যান্থনি স্কারামুচির নিয়োগের পরই সরে যান স্পাইসার।
ফক্স নিউজকে তখন একটি সাক্ষাৎকারে স্পাইসার বলেন, রান্নাঘরে অনেক বেশি রাঁধুনী থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সেই স্কারামুচিও ১০ দিন না যেতেই তার দায়িত্ব হারান।
৬. মাইকেল ফ্লিন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
ফ্লিনের বিদায়ই ছিলো সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। মাত্র ২৩ দিনের মাথায় ফেব্রুয়ারিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসলেই পদত্যাগে বাধ্য হন ফ্লিন।
আসলে মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগ করলেও প্রেসিডেন্টই তাকে এমনটি করতে বলেছিলেন। রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসলিয়াকের সাথে তার যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ফ্লিন ভাইস প্রেসিডেন্টসহ হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের ভুল পথে পরিচালিত করছেন, এমনটিও প্রকাশ পায়।