যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মশক নিধন কার্যক্রম ও সিটি করপোরেশন সাথে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এডিস মশা এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৯ জন। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এ সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে জুন থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে’তে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন আগস্টে ৬৭ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৫ জন।
এ নিয়ে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪২১ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৩৪৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৪ জন।
ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সী অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. এ বি মো. শামছুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি বছরে সারা দেশে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪২১ জন। সারা দেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৪১২ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি ৮ জন রোগী রয়েছেন। যারা সবাই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এরমধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দুই জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকার বাইরে নতুন কোন রোগী ভর্তি হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে একটি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছিল। মৃত্যুটি পর্যালোচনা শেষ করে সেটি ডেঙ্গুজনিত নয় বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ৫ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৯৬টি বাড়িতে বর্ষাপূর্ব এ জরিপ চালানো হয়। তাতে দুই সিটি করপোরেশনের কোনো এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বা ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি পাওয়া যায়নি।
কোনো এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ২০ বা তার বেশি হলে সে এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। জরিপে দুই করপোরেশনের বেশির ভাগ এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রার চেয়ে কম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আছে, কোন আশঙ্কাজনক তথ্য নেই। তারপরেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আসলে মশানিধন তো আমাদের কাজ না। আমাদের কাজ রোগী থেকে গেলে তার সঠিক চিকিৎসা দেওয়া। তারপরেও যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টি হয়েছে, তাই আমরা বাড়তি পদক্ষেপ নিয়েছি। নিয়মিত সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারা যেন তাদের কাজ সঠিকভাবে করেন।’’
‘’এরআগে আমরা সতর্কতা মূলক কাজ ও সার্ভে করেছি। যা কিনা কোভিড-১৯ এর ভেতর দ্রুততার সঙ্গে করেছি। আমরা দুই সিটি করপোরেশন সহ অন্যান্য যারা আছে তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি।’’
দুই সিটি করপোরেশন এই মৌসুমে ভালো কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে খুবই খারাপ অবস্থা ছিল, এ বছর এখন পর্যন্ত কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।এছাড়াও আমরা সারা দেশের সিভিল সার্জন অফিসে জানিয়েছিলাম জ্বর নিয়ে রোগী আসলে যেন সময় ক্ষেপন না করে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। এবং সিভিল সার্জনরা সেটাই করেছে।’’
অধ্যাপক শাহনীলা জানান, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এপ্রিল মাসকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মাস ঘোষণা করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সব উপজেলায় সরবরাহের জন্য ৬৪টি জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৪১ হাজার ৭০০টি কিট পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো পাঠানো হয়েছে। দেশে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের কোন সংকট নেই।’
গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এ বছরের শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সিটি কর্পোরেশনকে সাথে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এডিস মশা এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার অনলাইনে আয়োজিত ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ৬ষ্ঠ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে মুক্ত রাখতে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং মানুষকে সচেতনতার লক্ষ্যে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন-টিভিসি তৈরি করে প্রচার করায় ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।