বড় পর্দায় মুক্তির প্রায় চার বছর পর আবারও আলোচনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ‘ডুব’। কারণ ছবিটি এবার স্ট্রিমিং হয়েছে আন্তর্জাতিক ওটিটি প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্সে। নতুন করে মুক্তির পর বাংলাদেশের দর্শকদের পাশাপাশি ভারতীয় দর্শকরাও ছবিটি নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। কারণ এই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে যেমন অভিনয় করেছেন ভারতীয় সিনেমার মেধাবী অভিনেতা ইরফান খান, তেমনি সিনেমার নির্মাতা হিসেবে আছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী! ফলে ‘ডুব’ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়াতেও হচ্ছে আলোচনা।
৫ ফেব্রুয়ারি নেটফ্লিক্সে ‘ডুব’ মুক্তির পর ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো গুরুত্বসহকারে খবর প্রকাশের পাশাপাশি সিনেমাটির রিভিউও প্রকাশ করছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে টাইমস অব ইন্ডিয়া ছাপিয়েছে ‘ডুব’ এর রিভিউ। যা লিখেছেন চন্দ্রিমা পাল। মুক্তির চার বছর পর আলোচনায় আসা ‘ডুব’ এর নতুন দর্শকদের কথা বিবেচনা করে সেই রিভিউটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করা হলো:
ইরফান খানের অসাধারণ অভিনয় মেধা দেখার জন্য ‘ডুব’ দেখা উচিত ভক্তদের। বাংলাদেশের মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব-নো বেড অব রোজেস’ মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালে।
শোনা গিয়েছিল জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক, নির্মাতা, নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘ডুব’। কিন্তু মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সবসময়েই বলেছেন এটা ফিকশন, কারো জীবন অবলম্বনে তৈরি হয়নি।
‘ডুব’ ছবিটি হালকা মেজাজের নয়, সম্পর্কের জটিলতার গল্প। কখনও নীরব আবার কখনও কঠিন কিংবা সংক্ষিপ্ত ফ্রেমে ছবির গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঢাকার তারকা নির্মাতা জাভেদ হাসানের মধ্যবয়সের সংকট দেখানো হয়েছে। দুই সন্তানের বাবা, বিবাহিত জীবনের সেরা সময়গুলো শেষ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এর মাঝে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মেয়ের ক্লাসমেট নিতুর সঙ্গে। খবরটি মিডিয়ায় জানাজানি হয়ে যায়।
জাভেদ এবং মায়ার বিবাহিত সম্পর্ক ভেঙে যায়, বাবা হিসেবেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সন্তানদের থেকে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দর্শক অনুভব করতে পারেন ক্যামেরার কাজের মাধ্যমে। কখনও জানালা দিয়ে, কখনও পর্দার পেছন থেকে, বারান্দা এবং কাছের শাখাপ্রশাখার মাঝে ধরা হয় ক্যামেরা। কোনো দৃশ্যে দেখা যায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, আবার কোনো দৃশ্যে হেঁটে বের হয়ে যাওয়া। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ঝড়ের প্রভাব পড়ে জাভেদের সন্তানদের ওপর, বিশেষ করে মেয়ে সাবেরির ওপর।
নির্মাতা মনোযোগ দিয়েছেন ছবির অভিনয় শিল্পীদের শরীরের ভাষায়। যখন বাবা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, তখন মেয়ে বাবার পেছনে ছুটে আসে বাবার চাওয়া পানির গ্লাস নিয়ে। বাবার উপহার ফিরিয়ে দেয় ছেলে।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং বিয়ে বিচ্ছেদের গল্প সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা বেশ কঠিন। কারণ এটা শুধু স্বামী-স্ত্রীর বিষয় নয়, বাবা-সন্তানের সম্পর্কও দেখাতে হয় কোনো পক্ষ না নিয়ে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সেটি করার চেষ্টা করেছেন। চিরচেনা বাড়ি থেকে জাভেদ যখন বের হয়ে আসেন, তখন তিনি প্রেমিকাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন এবং ছেড়ে আসা পরিবারের শূন্যতা পূরণ করতে সন্তানের বাবা হন। তবে জাভেদ সুখ খুঁজে পেয়েছিলেন কিনা তা জানা যায় না শেষ পর্যন্ত।
দুঃখজনক এই ঘটনায় কেউই জিতে না শেষ পর্যন্ত। কিন্তু দর্শক অনুভব করতে পারে সন্তানদের হতাশা এবং কষ্ট।
জাভেদ চরিত্রে ইরফান খান দর্শকদের কাঁদাতে পেরেছেন। কিন্তু নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং পার্নো মিত্রের মতো প্রাপ্তবয়স্ক দুই অভিনেত্রীকে স্কুল ছাত্রীর চরিত্রে কিছুটা বেমানান লেগেছে।
‘ডুব’ ছবিটি দেখা শুরু করলে ধীরে ধীরে কাহিনীর ভেতরে ঢুকে দর্শক। ছবি দেখতে বসে এর শান্ত ছন্দের সাথে খাপ খাইয়ে নিলে, ছবির গল্পে ডুবতে শুরু করবে দর্শক।
পরিচালনা: ৩.৫/৫
সংলাপ: ৩.৫/৫
চিত্রনাট্য: ৩.৫/৫
মিউজিক: ৩.৫/৫
ভিজ্যুয়াল অ্যাপিল: ৪