সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাসমূহের বিরোধিতা ছিল। তবে সব ধরনের বিরোধিতা, আলোচনা, সমালোচনা অগ্রাহ্য করে বিতর্কিত ৫৭ ধারার চেয়েও কঠোর এই নিরাপত্তা বিল সংসদে পাস হওয়ার পর তাতে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর ফলে বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হলো।
সম্পাদক পরিষদ বিবৃতির মাধ্যমে এই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। আমরা তাদের সেই শঙ্কার সাথে একমত পোষণ করি। কারণ, এই আইনের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার টুঁটি চেপে ধরা এবং নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে। আমরা মনে করি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যেভাবে অপরাধ ঘটছে, তাতে এমন নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এসব অপরাধ দমন করতে গিয়ে সব সমালোচনা অগ্রাহ্য করে ঔপনিবেশিক আমলের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণমূলক ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ নতুন মোড়কে সামনে নিয়ে আসাকে আমরা সমর্থন করি না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আরেকটি ভয়ঙ্কর দিক হলো- এই আইনে পুলিশকে যেকোনো জায়গায় প্রবেশ, যেকোনো কম্পিউটার ব্যবস্থায় তল্লাশি চালানো, যেকোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সার্ভার জব্দ করা, যে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি এবং শুধু সন্দেহবশত যে কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি করবে। সম্পাদক পরিষদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আমরা বলতে চাই, স্রেফ সন্দেহবশত ও পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাওয়ার ফলে এই আইনের ছায়াতলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কবর রচিত হবে। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কখনোই এমনটা হতে পারে না।
এছাড়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদের সাথে আলোচনায় তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের আরও কয়েকজন মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, আপত্তির ধারাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। কিন্তু সেটা না করেই নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এই বিল কেন আইন হিসেবে কার্যকর করা হলো? এটা শুভ লক্ষণ নয় বলেই আমরা মনে করি।
বরাবরের মতো আমরা আবারও বলতে চাই, নির্বাচনের আগে সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনসহ জনগণের মতামত অগ্রাহ্য করে এই কানুন সরকারের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা। আমরা জানি এবং বুঝি যে ডিজিটাল এ যুগে ডিজিটাল নিরাপত্তা রাষ্ট্রের জন্য এক প্রধান অগ্রাধিকার। সে লক্ষ্যে আইনেরও দরকার আছে। কিন্তু তা যেনো গণমানুষ এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ না করে সেজন্য সরকারকে আইনটি সংশোধনের জন্য আমরা আহ্বান জানাই।