চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রিন্সেস ডায়ানার গোপন অডিও রেকর্ডে হৃদয় নিংড়ানো কষ্টের বর্ণনা

দিনের পর দিন ভগ্নপ্রায় বৈবাহিক জীবনের দ্বন্দ্ব আর স্বামীর পুরনো প্রেমের দিকে ফিরে যাওয়া – সব মিলিয়ে জমাট বাধা চাপা কষ্ট প্রকাশের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিখ্যাত রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানা । তাই ১৯৯১ সালের দিকে লুকিয়ে প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক অ্যান্ড্রু মর্টনের সাহায্য নিয়েছিলেন নিজের কথাগুলো সবাইকে জানানোর জন্য।

ওই সময় প্রিন্সেস ডায়ানার কাছ থেকে সব জেনে লেখা বই ‘ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এবার তার মৃত্যুর দীর্ঘ ২০ বছর পর পুনপ্রকাশিত হতে যাচ্ছে বইটি। আর এবারের মুদ্রণের সঙ্গে থাকছে বইটি প্রথম লেখার সময় ডায়ানার নেয়া সাক্ষাৎকারের অডিও টেপের লিখিত কপি।

’৯০-এর দশকে, অন্তত ১৯৯১ সাল পর্যন্ত খুব কম মানুষই জানত প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিগত জীবনের যন্ত্রণার কথা, তার বৈবাহিক জীবন যে ধ্বংসের মুখে ছিল সে কথা। ডায়ানার প্রেমের সম্পর্কের কথা কানে গেলেও খুব কম মানুষই শুনেছিল প্রিন্স চার্লস ও ক্যামিলিয়া পার্কার বউলসের পুরনো প্রেম জোড়া লাগার বিষয়টি।

রাজপরিবারের মানসম্মানের কথা ভেবে কাউকে কিছু বলতেও পারছিলেন না ডায়ানা। নিজের মধ্যেই সবকিছু জমিয়ে রাখছিলেন।ডায়ানা

হতাশ, ভেঙ্গে পড়া প্রিন্সেস অব ওয়েলস তাই লেখক অ্যান্ড্রু মর্টনের লেখনীর মধ্য দিয়ে নিজের আর নিজের পরিবারের কথাগুলো সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে শর্ত ছিল একটাই: তথ্যগুলোর উৎস হিসেবে কিছুতেই ডায়ানার নাম যেন কেউ জানতে না পারে।

সেই শর্ত মেনেই অ্যান্ড্রু মর্টন অডিও টেপে রেকর্ড করেছিলেন ডায়ানার সাক্ষাৎকার। বই প্রকাশের পরও এতদিন গোপনই ছিল সেই রেকর্ডগুলোর বক্তব্য। এবারই প্রথম সেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। বইয়ে মূল কথাগুলো লেখা হলেও রেকর্ডে রয়েছে পুরোপুরি ডায়ানার মুখের ভাষায় তার মন থেকে ঢেলে দেয়া সব কষ্ট।

রেকর্ডের শুরু ১৯৭৭ সালের নভেম্বরের প্রেক্ষাপটে, আলথর্পে ডায়ানার নিজ বাড়িতে। তখন ডায়ানার বয়স ছিল ১৬ বছর। তার ২২ বছরের বোন সারাহ্‌র সঙ্গে ২৯ বছর বয়সী চার্লসের প্রেম চলছিল। চার্লস তার ল্যাব্রাডর কুকুরটিকে নিয়ে আলথর্পে ক’টা দিন থাকতে গিয়েছিলেন। আর প্রথম দেখাতেই ডায়ানার মনে হয়েছিল, ‘ঈশ্বর, কি দুঃখী একটা মানুষ!’ডায়ানা

ডায়ানার ভাষায়, ‘আমার বোন সারাহ্‌ তার সঙ্গে সারাক্ষণ খারাপ র‌্যাশের মতো লেগে থাকত, আর আমি ভাবতাম, “ব্যাপারটা সে নিশ্চয়ই খুবই অপছন্দ করে”।

আমি সবসময় দূরে দূরে থাকতাম। আমার মনে আছে, আমি ছিলাম মোটা, গোলগাল, মেকআপহীন, আনস্মার্ট একজন মেয়ে। কিন্তু আমি খুব হইচই করতাম, আর সে (চার্লস) এটা পছন্দ করত। সে নিজেই রাতের খাবারের পর আমার কাছে এলো। আমরা অনেকক্ষণ নাচলাম, আর সে বলল: তুমি কি আমাকে গ্যালারিটা (ডায়ানার বাসায় থাকা চিত্রকর্মের গ্যালারি) ঘুরে দেখাবে?

আমি গ্যালারিতে নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সারাহ্‌ এসে হাজির হয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলো। আমি বললাম, অন্তত আমাকে গ্যালারির সুইচগুলো দেখাতে দাও। কারণ তোমরা তো জানো না সেগুলো কোথায়। দেখিয়েই আমি সরে পড়ি।’

ডায়ানা
বোন সারাহ্‌র সঙ্গে

সেই থেকে শুরু। ওইদিনই ডায়না দেখতে পান চার্লসের চোখের তার জন্য মুগ্ধতা। তারপর থেকে ৯ মাসের মতো সারাহ্‌র সঙ্গে প্রিন্স চার্লসের সম্পর্ক থাকলেও ডায়ানা বিভিন্ন কারণ বা উপলক্ষে যখনই তার সামনে গেছেন, তখনই টের পেতেন তার প্রতি চার্লসের অন্যরকম আগ্রহ। কিশোরী ডায়ানার দৃষ্টিতে যা ছিল অনেকটাই অদ্ভুত।

এমনই নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরও তিন বছর পর চার্লসের ডায়ানাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করা, বাগদান, বিয়ে, বিয়ের আগে থেকেই ডায়ানার জীবনে আসা ব্যাপক পরিবর্তন… সব বর্ণনা রয়েছে অডিও রেকর্ডে। চার্লসের বিয়ের প্রস্তাব যে প্রথম তিনি ঠাট্টা ভেবে হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেটাও বলেন সেখানে। বিয়ের পর বাকিংহাম প্যালেসে প্রতি মুহূর্তে অনুভূত হওয়া একাকিত্ব, সবার সামনে হাসিখুশি, বিনয়ী হয়ে হাজির হওয়া আর চার দেয়ালের ভেতর শিশুর মতো কেঁদে বুক ভাসানো – কারণ চার্লস কখনো পাশে থেকেও তার পাশে ছিলেন না, সব খুলে বলেছেন ডায়ানা।ডায়ানা

ওই সাক্ষাৎকারে প্রিন্সেস আরও জানান, তাদের বিয়ের অল্প সময় আগেও প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যামিলিয়া পার্কার বউলসের সঙ্গে প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ ছিল প্রিন্স চার্লসের। এটা জানতে পেরে চার্লসের কাছ থেকে ডায়ানা ওয়াদা নেন, সবসময় একে অপরের সঙ্গে সত্যি কথা বলবেন তারা। কিন্তু পরে সেই কথা চার্লস আর রাখেননি বলে তিনি অভিযোগ করেন। এমনকি ফোনেও একদিন লুকিয়ে ক্যামিলিয়ার উদ্দেশ্যে চার্লসকে বলতে শোনেন, ‘যাই ঘটুক না কেন, আমি চিরকাল তোমাকেই ভালোবাসব।’

ক্যামিলিয়াকে নিয়ে বিয়ের বেশ আগে থেকেই ডায়ানা আর চার্লসের ঝগড়া বাঁধত। কিন্তু প্রিন্স চার্লস সেসবে গা করতেন না। বিয়ের দু’সপ্তাহ আগেও ক্যামিলিয়ার জন্য চার্লসের কেনা উপহার দেখে ডায়ানা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, বিয়েটা তিনি করবেন না। কিন্তু রাজপরিবারে বিয়ে; তখন আসলে আর তার ফেরার উপায় ছিল না।ডায়ানা

অডিওতে প্রিন্সেস ডায়ানা স্বীকার করেন, বাগদান হওয়ার সপ্তাহ থেকেই তার বুলিমিয়া শুরু হয়। ‘বুলিমিয়া’ একটি মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা। এ সমস্যায় অতিরিক্ত হতাশা বা মোটা হয়ে যাওয়ার অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মানুষ খুব বেশি পরিমাণে খেতে থাকে। খাওয়ার পর আবার তীব্র অপরাধবোধ থেকে সে খাবার বমি করে উগড়ে দেয় ব্যক্তি। এই মানসিক জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে ডায়ানার প্রায় এক যুগ সময় লেগেছিল।

বাগদানের সপ্তাহে চার্লস ডায়ানার কোমরে হাত রেখেই বলে উঠেছিলেন, ‘ওহ, এদিকটায় মনে হয় একটু মোটা হয়ে যাচ্ছি, নাকি?’ ‘আমার মাঝে কথাটা কিছু একটা করে ফেলেছিল। তার সঙ্গে আবার ক্যামিলিয়ার বিষয়টা,’ বলেন ডায়ানা। এর প্রতিক্রিয়ায়ই বুলিমিয়া শুরু হয় তার। হঠাৎ অতিরিক্ত খাওয়া আর বমি করে ফেলে দেয়া – মানসিক থেকে এই শারীরিক অসুস্থতায় ডায়ানার দ্রুত ওজন কমতে থাকে।

ডায়ানা
প্রাক্তন প্রেমিকা ও দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যামেলিয়ার সঙ্গে প্রিন্স চার্লস

এরপর বিভিন্ন সময়ে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া অপমান, না পাওয়া সমর্থন, রাজপরিবারে সমার মাঝে থেকেও একা হয়ে থাকা, চাইলেও বলতে না পারা মনের কথা – সব কথা ডায়ানা খুলে বলেন তার ওই সাক্ষাৎকারে। আর এত বছর পর তারই পূর্ণাঙ্গ লিখিত রূপ পাওয়া যাবে ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি বইটিতে।ডায়ানা