ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি না করার জন্য সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ। একইসঙ্গে সবাইকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিএসসি ভিত্তিক সকল সংগঠন নিয়ে গড়ে ওঠা এই জোটের নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান।
এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল্লা সাদেক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সায়েন্স সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশা সাহা, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জয় প্রমুখ।
রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র টিএসসি। টিএসসি ভিত্তিক ২২ সংগঠনকে তারা গুরুত্ব দিতে চান। কেননা ১৯৯০ সালে ডাকসু বন্ধ হওয়ার পর এ সংগঠনগুলোই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তাই তারা এসব সংগঠনের সঙ্গে মিলে সুন্দরভাবে ডাকসু নির্বাচন করতে চান। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সকল সংগঠনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবেন তারা। এ লক্ষ্যে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্যানেল ঘোষণা করা হবে।
গোলাম রাব্বানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশা ভরসার জায়গা ডাকসু। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ হওয়ার পর টিএসসি ভিত্তিক সকল সংগঠনগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। ভবিষ্যতে তারা ডাকসুকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলে তিনি মনে করেন। এসময় তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা বলেন তিনি। ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে ‘ম্যানডেট’ দিবে তা তারা মেনে নেবেন। এসময় তিনি ভোটকেন্দ্র নিয়ে ‘বিতর্ক সৃষ্টি’ না করার জন্য সকল ছাত্র সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য অচল ডাকসুকে সচল করতে হলে সবার ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। ভোটের রাজনীতির সুযোগ নিয়ে কেউ যেন শত-সহস্র শহীদের রক্তাক্ত পবিত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা না করে- সেই আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রাণের অঙ্গন আবাসিক হলগুলোতেই হয়ে আসছে। এরই ধারবাহিকতায় এবারও হলে ভোটকেন্দ্র হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেটি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো আপত্তি নেই, বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। তাই অযথা ভোটকেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক বাড়িয়ে ডাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার পায়তারায় পা না দিতে সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনকে আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও লিখিত বক্তব্যে নির্বাচনের আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি।