ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাস এবং হলগুলোতে ন্যূনতম ৩ মাস সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১ টায় ৭ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর স্বারকলিপি দেয় ছাত্রদল।
এসময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীসহ ছাত্রদলের দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলের যেসব দাবি
১. নূন্যতম ৩ মাস সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নিশ্চিত করার পর ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
২. অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
৩. সকল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩০ বছর বয়সসীমার পরিবর্তে ভর্তি সেশন নির্ধারণ করতে হবে।
৪. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের প্রচারণায় অংশগ্রহণে বাধা প্রদান করা যাবে না এবং হামলা, মামলা ও গ্রেফতার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও নেতাদের উপর হওয়া হামলার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
৬. ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের এসব কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
৭. ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫ এর (এ) অগণতান্ত্রিক ধারাটি সংশোধন করে সভাপতি ও ছাত্র সংসদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয় সংযোজন করতে হবে এবং ৮ এর(এম) ধারাটি সংশোধন করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আমাদের দাবিগুলো তারা মেনে নিবেন। না মানার কোনো কারণও নেই। কারণ তিনি (ভিসি) আমাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করেছেন।
‘‘সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে তিনি দাবিগুলোর ব্যাপারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিবেন এবং আমারা ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আমরা দেখতে চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিবে না এটা আমরা বিশ্বাস করি না।’’
তফসিলের আগে তিন মাস সহাবস্থান নিশ্চিতের কারণ জানতে চাইলে রাজিব বলেন, ‘সহাবস্থানের বিষয়টি এমন যে এটিকে যদি কার্যকর করতে হয় তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের দরকার। আজকে সহাবস্থান দিয়ে কালকে কিন্তু এটাকে কার্যকর বা স্থায়ী বলা যাবে না। ডাকসুকে কেন্দ্র করে সহাবস্থান নয়, আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি স্থায়ী সহাবস্থান থাক।’
গত মতবিনিময় সভার পর ছাত্রলীগ আহ্বান জানালেও ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আকরামুল হাসান বলেন, ‘পরিবেশ পরিষদের সভার পর আমি চা খেতে যেতে চেয়েছি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাগত জানালেও অন্য নেতৃবৃন্দ আন্তরিকতা দেখায়নি। এজন্য আমরা যাইনি।’
‘‘তাছাড়া কিছুদিন আগেও আমাদের বুরহান উদ্দীন সৈকত নামে ছাত্রদলের জহরুল হক হলের এক নেতাকে মেরে আহত করা হয়েছে। এরকম একটা পরিবেশে আমরা চাই না ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, আমাদের আগমনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক এবং ডাকসু নির্বাচন ব্যাহত হোক।’’
এরপর উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর, টিএসসি হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
উপাচার্য যা বললেন
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
এসময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ আমাকে স্মারকলিপির মাধ্যমে তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেছে। আমি তাদের বলেছি যে, ডাকসুর জন্য নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র রয়েছে এবং একটি আচরণবিধি প্রণীত হয়েছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্র এবং আচরণবিধি অনুসরণ করে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্রের বিধিবিধান এবং আচরণবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।’
ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে কথাও বলেন উপাচার্য। বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তাদের প্রক্রিয়া মোতাবেক পরিচালিত হবে। এখানে উগ্রপন্থি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত এবং পরিবেশ পরিষদের বাইরের অন্য কোনো সংগঠনের কর্মতৎপরতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকবে না। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে যের সকলে যত্নশীল থাকে।’
নির্বাচনের তফসিল কবে নাগাদ ঘোষণা হতে পারে – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি পরিষদ রয়েছে, চিফ রিটার্নিং অফিসার এবং তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসাররা রয়েছেন। তারা এ বিষয়ে তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন। গঠনতন্ত্র এবং আচরণবিধি অনুসরণ করে তারা সকল কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করবেন। এটিই হলো আমাদের রীতি। তারাই এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।