বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম শুক্রবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে নোবেল কমিটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম, না অন্য কেউ পাচ্ছেন সেই পুরস্কার? তা নিয়ে তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে পুরো বিশ্বে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে। তারপর থেকেই এ পুরস্কারটি রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এবারও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে কে পাচ্ছেন তা।
কে পেতে পারেন বা কারা আছে পাওয়ার তালিকায় তার কোনো পূর্ব সিদ্ধান্ত না জানা গেলেও ২০২০ সালে এগিয়ে থাকাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে টাইম ডট কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হাতে এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার উঠতে যাচ্ছে- এমনটাই শোনা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
১১ মার্চ কোভিড-১৯ কে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে ঘোষণা করা থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্যের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা, এই রোগের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিতে সক্ষমতা বাড়ানোসহ করোনায় সামনের সাড়ি থেকে দায়িত্ব পালন এবং বিশ্বের কেন্দ্রে পরিণত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ বছর তারা কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য তুর্কমেনিস্তান এবং ইরানের মতো বৈচিত্র্যময় দেশগুলোতেও প্রতিনিধি প্রেরণ করেছে।
গ্রেটা থানবার্গ: জলবায়ু আন্দোলনকর্মী কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ ফেভারিটের তালিকায় রয়েছে।
টাইমস ম্যাগাজিনের বছরের সেরা ব্যক্তি, সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ ইতিমধ্যে তার জলবায়ু পরিবর্তনের কার্যক্রমের জন্য “বিকল্প নোবেল পুরষ্কার” অর্জন করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার পরে, গ্রেটা ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কারের প্রাপ্যদের তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
২০২০ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বিবেচিত তাদের মধ্যে থানবার্গকে এগিয়ে রেখেছে।
জাসিন্ডা আরর্ডান: এবারের পুরস্কার বিজয়ের তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠতম নারী প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরর্ডান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিতর্কে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কথা হয়।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চে হত্যা প্রতি তার দৃঢ় অবস্থান ও করোনায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ফলে সবচেয়ে কম মৃত্যু হার ধরে রাখার ফলে ২০২০ সালের পুরস্কারের প্রতিযোগী করে তুলেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার বলেছেন, যে তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। ওহাইওর টোলেডোতে ২০২০ সালের জানুয়ারির একটি সমাবেশে তিনি তার সমর্থকদের বলেছিলেন যে, অবি আহমেদকে দেওয়া ২০১৯ সালের পুরস্কারটি তাকে উচিত ছিল।
২০১৮ সালে, ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি নর্থ কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে পারমাণবিক অস্ত্র ছেড়ে দিতে রাজি করার প্রচেষ্টার জন্য তিনি এই পুরস্কারের অধিকারী। তবে, একটি সাম্প্রতিক মার্কিন রিপোর্টে বলা হয়, নর্থ কোরিয়া এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়া মধ্যেপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাইরানের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে হওয়া চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ট্রাম্পের সম্ভাবনা বেড়েছে।
এছাড়া নারী অধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়া লৌজাইন আল-হাথলল ও রয়েছেন এ তালিকায়।
অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর হেনরিক উরদাল মনে করেন, ‘এবার সম্ভবত সাংবাদিকদের কোনো সংগঠন অথবা কয়েকজন সাংবাদিক ২০২০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারেন। সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোর তথ্য তুলে ধরার স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার পেতে পারেন তারা।’
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট মনোনয়নের সম্ভাব্য তালিকায় আছে বলে মনে করেন হেনরিক।
গত বছরই কিশোরী জলবায়ুকর্মী থানবার্গের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছিল। এবারও এই সুইডিশ কিশোরী মনোনয়নের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দকরোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সবচেয়ে ফেভারিট হিসেবে সামনে এনেছে। জাতিসংঘের এ সংস্থাটি আদৌ মনোনীত হয়েছে কিনা তা জানা নেই কারও।
তবে পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটি যদি সত্যিই সংস্থাটির নাম ঘোষণা করে, তবে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অপমাননাকর। কারণ ট্রাম্প এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন, অন্যদিকে তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য বলে একাধিকবার দাবি করেছেন।
২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, ২০১৮ সালে যৌথভাবে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন কঙ্গোর মানবাধিকার কর্মী ডেনিস মুকওয়েগে এবং ইরাকের নাদিয়া মুরাদ। ২০১৭ সালে পুরস্কারটি পেয়েছিল পরমাণু অস্ত্রবিরোধী জোট ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপনস। এ ছাড়া ২০১৬ সালে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস এবং ২০১৫ সালে তিউনিসিয়ান ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।