যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন। ঠিক ওই সময় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পাশে দেখা যাবে এক অজ্ঞাতনামা, অপরিচিত সামরিক কর্মকর্তাকে।
ওই সামরিক কর্মকর্তার হাতে বা কাঁধে ঝোলানো থাকবে মোটাসোটা একটি ব্রিফকেস, যা ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ নামে পরিচিত। ব্যাগের ভেতর থাকবে ‘বিস্কিট’ নামের ছোট্ট একটি যন্ত্র।
৫ ইঞ্চি লম্বা ও ৩ ইঞ্চি চওড়া ওই যন্ত্রের ভেতরেই থাকবে কৌশলগত পারমাণবিক হামলা চালানোর ‘লঞ্চ’ বা নিক্ষেপ কোড। কীভাবে যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হয় সেটি আগেভাগেই লোকচক্ষুর আড়ালে ট্রাম্পকে শেখানো থাকবে। যখনই শপথ গ্রহণ শেষ হবে, তখনই ওই সামরিক কর্মকর্তা আর তার ব্যাগ নীরবে চলে যাবে ট্রাম্পের পাশে।
এর পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে চলে যাবে এমন এক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা, যার কারণে মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
ঠিক এ কারণে এখন অনেক মানুষের মাথায়ই একটা প্রশ্ন ঘুরছে – এমন আবেগতাড়িত মেজাজের একজন মানুষের হাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকার পর সেই ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা থাকবে, বা আদৌ কোনো ব্যবস্থা থাকবে কিনা?
বিবিসি জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে যেসব প্ররোচণামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন তার থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। সম্প্রতি নিজেকে “এই অস্ত্র ব্যবহারকারী শেষ ব্যক্তি” বলে দাবী করেছেন। যদিও সেই সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দেননি।
পারমাণবিক হামলার চেইন অব কমান্ডে সাবেক মার্কিন নৌ জেনারেল ও নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল জেমস ম্যাটিসের মতো অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তারাও থাকবেন। তবে ওয়াশিংটনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্ক ফিজপ্যাট্রিকের মতে, হামলা চালানোর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব শুধু প্রেসিডেন্টের ওপরই থাকবে।
মার্ক বলেন, “পারমাণবিক হামলা চালানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো যাচাই-বাছাই বা ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ নেই। তবে তিনি নির্দেশ দেয়া থেকে বোমা নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত আরও কিছু মানুষ এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে।”
কোনো প্রেসিডেন্ট একাই এমন বিশাল একটা সিদ্ধান্ত নেবেন – চিন্তাটা অনেকটাই অবাস্তব। তিনি নির্দেশ দেবেন এবং সাংবিধানিকভাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেই নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন।
তাত্ত্বিকভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর যদি প্রেসিডেন্টের মানসিক সুস্থতা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে, তবে তিনি নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। তবে তখন একে একটি অভ্যুত্থান হিসেবে গণ্য করা হবে এবং প্রেসিডেন্ট চাইলে তাকে তৎক্ষণাৎ চাকুরিচ্যুত করে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুসারে, ভাইস প্রেসিডেন্ট চাইলে প্রেসিডেন্টকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানসিকভাবে অসমর্থ ঘোষণা করতে পারেন। অবশ্য সেজন্য মন্ত্রিসভার অধিকাংশের সমর্থন লাগবে তার।
যেভাবে কাজ করবে নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোড
‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ নামের ব্রিফকেসটির ভেতর একটি ‘ব্ল্যাক বুক’ রয়েছে যার ভেতর কী ধরণের হামলা চালাবেন তার অপশন থাকবে প্রেসিডেন্টের জন্য। এর আগে ব্রিফকেসটি খোলার জন্য একটি প্লাস্টিক কার্ড ব্যবহার করে তিনি নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট যখন একটি লম্বা তালিকা থেকে বাছাই করে বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ দেবেন, তখন প্রথমেই নির্দেশটি যাবে পেন্টাগনের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর, পেন্টাগনের ওয়ার রুমে। এরপর সেটি যাবে নেব্রাসকা বিমান ঘাঁটির মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড সদর দপ্তরে।
সেখান থেকে গোপন কোডের মাধ্যমে নির্দেশটি পাঠানো হবে যারা মূল বোমাটি নিক্ষেপ করবে তাদের কাছে। তারা তখন কোডটি তাদের কাছে রাখা একটি সিন্দুকের ভেতর রাখা কোডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে।
বিবিসি হোয়াইট হাউজের একজন সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, যদি কোনো দেশের ওপর পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তে নিউক্লিয়ার হামলা চালানো হয় তাহলে এর সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিসভার বড় একটি অংশ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা।
তবে যদি আকস্মিকভাবে কৌশলগত কোনো হুমকি দেখা দেয়, যেমন, কোনো শত্রুরাষ্ট্র থেকে মিসাইল আসছে এবং তা কয়েক মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে এককভাবে পারমাণবিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার।