ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সফলতা রয়েছে তবে তা প্রত্যাশা অনুযায়ী নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেছেন, সড়কে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মধ্যেই রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার সিগনালে ‘মাসব্যপী ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে আমরা প্রধনমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ঈদের আগে ১০ দিনব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ এবং ঈদের পর সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের কার্যক্রমে স্কাউট, গার্লসগাইড, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়তা করছে। এছাড়া বিআরটিএ, সিটি কর্পোরেশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করছি।’
‘গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে কতটা অগ্রগতি হয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের আন্তরিকতা বা প্রচেষ্টার ঘাটতি ছিল না।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত দুই মাসব্যাপী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে আমরা কাঙ্খিত পর্যায়ে যেতে পারিনি। তবে ধারাবাহিক এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সকলকেই আইন মানতে হবে, আইন না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত আমরা স্বয়ংক্রিয় বাতির আওতায় আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন কারণে বাতিগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। কারণ বাতিগুলো সরকারের অন্য সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে আমরা সকল সংস্থার সঙ্গেই সমন্বয় করছি।
‘ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তাদের কর্মসংস্থানের বিষয় রয়েছে, লেগুনা কোন পথে চলবে বা কোন পথে চলবেনা আমরা সেসব ভাবছি। সাফল্যের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুশৃঙ্খল নগরী গড়ে তোলার প্রত্যাশা করছি।’
আমাদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতাই সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পথচারীদের জোর করে ফুটওভারব্রীজে উঠতে বাধ্য করতে হয়। ইতোমধ্যে আমরা চালকদের সঙ্গেও বহু মিটিং করেছি। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ব্যপক নয়। আমরা প্রত্যাশা করব, সমাজের সকল দায়িত্বশীলরা আইন মানবেন। সবাই আইন মানার সংস্কৃতি চালু করুন, নিজে আইন মানুন ও অন্যকে আইন মানতে উদ্ভুদ্ধ করুন।
‘শত বছরের অভ্যাস দুই-এক মাসেই পরিবর্তন হয়ে যাবে, আমরা সেটা প্রত্যাশাও করি না। তবে সকল প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালের মধ্যেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নির্ধারিত বাস স্টপেজে আমরা স্টপেজ শুরু থেকে শেষ সাইবোর্ড টানিয়েছি। মোটরসাইকেলে দুই আরোহীর হেলমেট নিশ্চিত করা কিংবা দুইজনের অধিক আরোহী বহন না করার বিষয়ে আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি। পথচারীদের ফুটওভারব্রীজ ব্যবহারেও সফলতা এসেছে কিন্তু কাঙ্খিত মাত্রায় আসেনি।’
আমরা বিদেশে গেলে কিংবা ঢাকার বিশেষ কোন এলাকায় গেলে আইন মানি কিন্তু সড়কে নামলে আইন মানিনা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, শুধু পুলিশ নয়, সরকারের কোনো বাহিনী দিয়ে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়, যতক্ষন না আমাদের মধ্যে আইন মানার প্রবনতা তৈরি হবে।
দুই মাসব্যাপী অভিযানে ডিএমপি প্রায় ৭ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সময়ে আমরা পর্যাপ্ত গাড়ি ডাম্পিং ও রেকারিং করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রাস্তাঘাটে যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এটা একটা প্রক্রিয়া। তবে বড় বিষয় অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা। সরকারের পক্ষ থেকে এজন্য স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘদেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যদি কোন ব্যক্তি অনিয়ম করে তাহলে সেই দায় একান্তই তার। কোন ব্যক্তির দায় তার প্রতিষ্ঠান নেবে না, যদি কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।