বাংলাদেশের যে অগ্রগতি, দৃশ্যমান উন্নয়ন, মানবিকতার সোপান, যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্রমান্বয়ে ইতিবাচকতার ধাপ অতিক্রম করছে সে হিসেবে অদূর ভবিষ্যতে এ দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিনোদন, সামাজিক উন্নয়ন, সড়ক ও যোগাযোগ সর্বোপরী চিকিৎসাব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াবে। কিন্তু কোথায় যেন সকলের মাঝে ভয়, শঙ্কা, দ্বিধা ও সন্দেহের আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেননা প্রতিনিয়ত আমরা নানা রকমের নেতিবাচক চিত্র, প্রতিবেদন, খবরের শিরোনাম দেখে আশাহত হয়ে পড়ি। আমাদেরকে আশাহত করার সংবাদ যদি প্রতিনিয়ত তৈরি না হতো তাহলে বাংলাদেশের অগ্রগতির সোপানের প্রতিচ্ছবি বিশেষ মাত্রা বহন করতো নিঃসন্দেহে। আমরা প্রত্যাশা করবো, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিক দেশের স্বার্থে, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কখনোই অপকর্ম এবং গর্হিত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না।
খবরের কাগজে প্রত্যেকে দিনের সংবাদে নেতিবাচক সংবাদ দেখে আমরা যারপরনাই বিরক্ত এবং বিব্রত। নেতিবাচক খবর যাদের কারণে হচ্ছে সে শ্রেণির মানুষ এবং গোষ্ঠী দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে কিংবা ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এ সকল মানুষদের বিরুদ্ধে সরকারের স্বচ্ছ এবং অটল ও অটুট নীতি বহাল রাখা জরুরী। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে রেগুলার রুটিন ভিত্তিক কাজ হওয়া প্রয়োজন। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পরে সারাদেশের মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশার ঢালি সঞ্জীবন হয়েছিল, অভিযান বন্ধ হওয়ার পর তার থেকে সেক্ষেত্রে কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। আবার পাপিয়ার গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রত্যাশার যে বীজ বপিত হয়েছে বলে মনে করি, সেরকম অভিযান অব্যাহতভাবে পরিচালনা করে টেনে নামানোর সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে সহায়তা করবে সরকার। কেননা একশ্রেণি বাংলাদেশকে লুটেপুটে খাবার পায়তারা করছে দেশি বিদেশি কূটশ্রেণির মানুষদের সহায়তায়, তাদেরকে যে কোন উপায়ে রদ করতে হবে দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য। কারণ প্রিয় এ দেশটি অনেক সংগ্রাম, ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে কিছু কুচক্রী মহলের পায়তারায় দেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে নস্যাৎ করে দেওয়া যাবে না।
অন্যদিকে, কারো সফলতায় আমরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পরচর্চা, পরনিন্দা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতি করার চেষ্টা করে থাকি। এ ধরনের অপসংস্কৃতি, হীনমন্যতা, বিরাগভাজন এবং অপকর্ম থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা যদি প্রকৃতপক্ষে মানবিক, স্বাভাবিক, সুস্থ, বুদ্ধিদীপ্ত, নীতিবান ও উন্নত মানসিকতার অধিকারী হই তাহলে আমাদের প্রকৃত কাজ হবে কারো প্রতি বিষোদাগার না করে মেধা, মনন এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে প্রতিযোগিতা করে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়া। যেখানে ইতিবাচক কাজের ক্ষেত্রে একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজের কর্মের মধ্যে প্রতিশ্রুতিশীলতার বাস্তব প্রয়োগ ঘটবে এবং ফলশ্রুতিতে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রথাগত পরিবর্তন আসবে। অন্যকে খাটো করা, ছোট করে দেখা, টেনে নামানোর সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার চর্চা প্রত্যেককে করা উচিত, কেননা এ ধরনের অপসংস্কৃতি কারোর জন্য মঙ্গলজনক নয়।
টেনে নামানোর সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রত্যেক সেক্টরেই দেখা যায়, উপরের লেভেল থেকে নিঁচু স্তর পর্যন্ত অপসংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে। বিদ্যায়তনিক পৃথিবীর চলমান বিকাশে বাংলাদেশ যদি এ ধরনের গর্হিত সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারে তাহলে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুসংহত হতো, স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন ও গঠনমূলক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং যে পরিবর্তন সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও আশাজাগানিয়া হবে। নানা রকমের উদাহরণ কিন্তু দেখা যায় আমাদের সংস্কৃতিতে ও সমাজব্যবস্থায়। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অসংখ্য অর্জন রাজনীতিবিদদের হাত ধরে এসছে। দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। সেখানে একটি পক্ষ সর্বদা বিরোধিতার কারণে অন্য পক্ষের বিরোধিতা করে থাকে, যাচাই বাছাইয়ের তোয়াক্কা না করে বাক্যবাণে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের দেশ পরিচালনার সময়ে অবশ্যই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় আমাদের কিন্তু সে সকল বিষয়ে সাধুবাদ জানানো উচিত। পাশাপাশি যে সকল বিষয় দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে সে সকল বিষয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত।
কাজেই, মানবিক মূল্যবোধে বলীয়ান হয়ে মানবিকতার চর্চা বহাল রাখা জরুরি। যেখানে থাকবে না পারস্পারিক দ্বন্দ্ব, হীনমন্যতা, অন্যের অনিষ্ট করার ষড়যন্ত্র। আমরা মেধাভিত্তিক কার্যক্রমের প্রতিযোগিতা চালু রাখবো, গবেষণায় পরস্পরের প্রতিযোগী হবো যেখানে সকলেই দেশের পলিসি লেভেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বৃদ্ধিভিত্তিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবো তাহলেই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের যাত্রা আরো বেগবান ও সুখকর হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)