ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাত আটটার মধ্যে সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করার নতুন নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নারী কর্মীদের টিএসসিতে অবস্থানে আলাদা ধরণের নিয়ম মানতে বাধ্য করারও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীরা সমালোচনা করছেন জোরেশোরে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন নিয়ম শৃঙ্খলা আর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার এ বিষয়ে টিএসসির পরিচালক এ এম এম মহিউজ্জামান চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন এসেছে, তাই নতুন নিয়ম-নির্দেশনা আসা স্বাভাবিক। কর্তৃপক্ষ চায় না ওরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে কেবল সংগঠন করুক। আর টিএসসিতে কিছুটা নিয়ম-শৃঙ্খলারও দরকার আছে। শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতেই এই নোটিশ।
তিনি বলেন: বিশ্ববিদ্যালয় এবং নগরীর সাংস্কৃতিক-সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা টিএসসি। এখানে অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে এবং এসব সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। সিমেস্টার পদ্ধতির ভেতরে থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে থাকে। কর্তৃপক্ষ চায় না ওরা পড়ালেখা বাদ দিয়ে কেবল সংগঠন করুক।
২০১৪ সালের নির্বাচনকালীন সহিংসতার পর রাত ৮ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) গেটে তালা দেয়ার নিয়ম চালু করেছিলো তৎকালীন প্রশাসন। এখন দেশে সেরকম কোনো জরুরি পরিস্থিতি কিংবা নিরাপত্তা সংকট না থাকলেও ১৭ অক্টোবর টিএসসির সব সংগঠনে রাত ৮টার পর কার্যক্রম চালানো যাবে না বলে নোটিশ পাঠানো হয়।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ী এ নোটিশ জারি করা হয় বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী। তবে দায়িত্ব ছাড়ার মাত্র দু’দিন আগে সংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো নোটিশে নিজের নাম উল্লেখ থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি।
অধ্যাপক আমজাদের জায়গায় নতুন প্রক্টর হিসেবে রোববার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. একে এম গোলাম রব্বানী। নোটিশের বিষয়ে অবগত হয়ে সংগঠন এবং শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা আমলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে ড. রব্বানী বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণ করবো রোববার। জারি করা নোটিশ বিষয়ে অবগত হয়ে তারপরে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিৎ হবে। তবে প্রক্টর হিসেবে ছাত্র-শিক্ষকের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজনীয় যা করণীয় তাই করার চেষ্টা করবো।’
প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই নোটিশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সংগঠনগুলোর জন্য নোটিশ জারি করা হলেও গতকাল শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে টিএসসির ভেতরের প্রাঙ্গণ থেকেও ছেলে-মেয়েদের বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
টিএসসি’র দোতলার সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রভাতফেরী’র কর্মী সৈয়দা নীলিমা দোলাকে গতকাল রাত ৯ টার দিকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন কর্মচারীরা। সুফিয়া কামাল হলে থাকা সংগীত বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন: সংগঠনের কক্ষে এসে কর্মচারীরা আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন কয়েকজন ছেলেও ওই কক্ষে ছিলো। আমাকে বলা হয় ওনারা থাকলে সমস্যা নেই কিন্তু আপনাকে চলে যেতে হবে। এটাই নতুন নিয়ম।
১৭ অক্টোবর নোটিশ জারির পরও সংগঠনের কক্ষে কেন অবস্থান করছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষার্থী বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের হলের পর সবচেয়ে নিরাপদ এবং প্রাণখুলে নিজের মতো থাকার জায়গা টিএসসি। আমি রাত ৯টা-সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এখানে থেকে অভ্যস্ত। সাড়ে ৯ টায় হল বন্ধ হয়ে যায় বলে এমনিতেই মেয়েরা রাতে এখানে থাকে না। যাদের নিজেদের বাসা আছে তারা চাইলে নিজের ইচ্ছামত সময় পর্যন্ত এখানে থাকলে সমস্যা কোথায়?
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নতুন নোটিশ জারির পর শুধু সংগঠন নয় সংগঠনের বাইরে টিএসসির সর্বত্রই চলছে নতুন খবরদারি। এই খবরদারির কারণে শুক্রবার ৮ টার কয়েক মিনিট পরে বন্ধুদের নিয়ে বের হয়ে আসতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ করেছেন টেলিভিশন,ফিল্ম এবং ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার পপি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: রাত তখন ৮ টার একটু বেশি। আমরা কয়েকজন বন্ধু-সিনিয়র টিএসসির ভেতরে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় টিএসসির কর্মচারীরা এসে বললেন এখন বের হয়ে যেতে হবে। এখন থেকে নাকি এটাই নতুন নিয়ম!
এরকম নতুন নিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে টিএসসির পরিচালক এ এম এম মহিউজ্জামান চৌধুরী বলেন: নোটিশে কোথাও এ ব্যাপারে নির্দেশনা নেই। বাইরে বসাদের উঠিয়ে দেয়াটা নোটিশের অপব্যাখ্যা বা ভুল প্রয়োগ। এরকম কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
টিএসসির সকল সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো নোটিশে লেখা হয়: ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে অবস্থিত সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, বিবিধ বিবেচনায় নিরাপত্তার স্বার্থে আপনাদের নিজ নিজ সকল প্রকার অফিস কার্যক্রম সকাল ৯টা হতে রাত্রি ৮ টার মধ্যে শেষ করতে হবে। কাজের স্বার্থে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রাত্রি ১১ টা পর্যন্ত শিথিল করা যেতে পারে।’