বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রিন্ট সংস্করণের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কথিত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের তালিকা প্রকাশ করে নৃশংস কায়দায় হত্যা, বিদেশী খুন এবং জঙ্গিদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের তৎপরতায় আতঙ্কিত সময় পার করছে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল ধারার জনগণ।
ভবিষ্যতের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ টাইমকে বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে ব্লগার খুনের পর বিদেশীদের গুলি করে হত্যার ঘটনা অশুভ ইঙ্গিত।
নিখিল কুমার এবং ফরিদ হোসেনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অস্থিতিশীলতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির সময়ে বাংলাদেশেও এধরণের জঙ্গি তৎপরতায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক না দেশীয় গোষ্ঠী জড়িত তা নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকরা দ্বিধান্বিত।
আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলোর সাথে যোগযোগ না থাকলেও স্থানীয় জঙ্গিরা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ছাড়বে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আলী রীয়াজ।
রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থি ইসলামি শক্তির হামলায় চলতি বছরেই চারজন নিহত হয়েছেন। যার সর্বশেষ শিকার নিলাদ্রী চট্টোপধ্যায়। ২০১৩ সালে রাজীব হায়দারকে নিশৃংসভাবে হত্যার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই নাশকতার শিকার সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা শাহবাগ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের সাথে জড়িত সবাই নাস্তিক এমন প্রচারণা চালায় জঙ্গি দলগুলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয় ভারত ও পাকিস্তান, আর পাকিস্তান থেকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ভূখন্ড পাওয়া মুসলিমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটটিতে বাংলা ভাষা ও চিরাচরিত সংস্কৃতির ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের আশায় যুদ্ধ করছে মুক্তমনারা।
বাংলাদেশের ইংরেজী পত্রিকা ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক এবং লেখক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু এখনও আমাদেরকে বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘ যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
উগ্রপন্থি ইসলামি গোষ্ঠির হত্যার তালিকায় থাকা ব্লগার আরিফ জেবতিক বর্তমান সময়ে তার আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাতের কথা বলতে গিয়ে ভয়াল এক অভিজ্ঞতার কথা জানান।
অর্থ সংগ্রহের আশায় তিনজন মাদ্রাসা ছাত্র তার আরিফের বাসার নিচে আসে। তাদের চলে যেতে বললেও তারা যায় না। যা বাড়ির দারোয়ান ফোনে জানালে বাসায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। জেবতিকের মা দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাকে বাথরুমে লুকিয়ে থাকতে বলে। অথচ পরে দেখা যায়, তারা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতেই সেখানে অবস্থান করছিলো।
আরিফ জেবতিকের জবানিতে এই ঘটনার বয়ান মুক্তমনা উগ্রপন্থিদের দাবি করা নাস্তিক লেখকদের চরম নিরাপত্তাহীনতাকেই প্রকটভাবে তুলে ধরে।
তবে, টাইমের রিপোর্টে বলা হয়, ব্লগারদের খুনের ঘটনায় যথাযথ বিচারের আশ্বাস দিয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গাটিতে সতর্ক উচ্চারণ করেছেন। ধর্মের বিরুদ্ধে কারও লেখা বা বলার কোনো অধিকার নেই বলে এক বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ইসলামি জঙ্গিবাদের শক্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষদের সাথে উগ্রপন্থিদের চলমান দ্বন্দ্ব বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।