চট্টগ্রাম থেকে: বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে- ৩৭৪/৪ (মুমিনুল-১৭৫*, মাহমুদউল্লাহ ৯*)
ব্যাটিং ব্যর্থতায় ত্রিদেশীয় সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে। মিরপুরে সেই দুঃখের দিনেই আরেকটি দুঃসংবাদ পায় বাংলাদেশ, প্রথম টেস্ট খেলতে পারবেন না অধিনায়ক সাকিব। হতাশা ছড়ানোর অনেক অনুষঙ্গ যখন টাইগার দলকে ঘিরে ধরেছে, তখন দরকার ছিল দারুণ কিছু প্রদর্শনের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই কাজটাই করলেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। নানামুখী চিন্তা নিয়ে শুরু হওয়া দিনটি উৎসবে রাঙিয়েছে দুজনের ২৩৬ রানের জুটি।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঝকঝকে রোদের আলোয় রেকর্ড জুটি উপহার দিয়েছেন মুশফিক-মুমিনুল। বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি, আর যেকোনো উইকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ।
তবে দিনের শেষটা ছিল আক্ষেপের। রোদের তেজ যখন মিইয়ে এসেছে, তখন মুশফিক নার্ভাস নাইনটিজে (৯২) সাজঘরে ফেরার পরের বলেই লিটন দাস (০) শিকার সুরঙ্গা লাকমালের। দ্রুত দুই উইকেট নেই।
তারপরও প্রথমদিন শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলতে পারে বাংলাদেশ। মুমিনুল হক অপরাজিত ১৭৫ রানে। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে রেখে মাঠ ছেড়েছেন কক্সবাজারের টাইগার তারকা।
মুমিনুল-মুশফিকের তৃতীয় উইকেট জুটিটিই রং চড়িয়েছে বাইশ গজে। তার আগে মাঘের হিমশীতল সকালে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস দারুণ করেছেন। শুরুতে একটু নড়বড়ে থাকলেও রোদের আলোর প্রখরতা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাট চওড়া করেছেন টাইগার ওপেনিং জুটি।
ভাল শুরু পেলেও অর্ধশতক করার পরই তামিমের সাজঘরে ফেরা আক্ষেপ হয়ে থেকেছে। তার ৫৩ বলে ৫২ রানের ইনিংস শেষ দলীয় রান যখন ৭২। ইমরুলের সঙ্গে তিন নম্বরের স্পেশালিষ্ট মুমিনুল জুটি বাঁধলে শতরান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। ১২০ রানের মাথায় অফস্পিনার সান্দাকানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল (৪০)।
ড্রেসিংরুমে ফিরে অবশ্য আফসোস করতে হয়েছে এ বাঁহাতিকে। রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বলের উচ্চতা এতটা ছিল যে অনায়াসে চলে যেত স্টাম্পের অন্তত তিন ইঞ্চি উপর দিয়ে। পরে কেবলই মুমিনুল-মুশফিকের ব্যাটিং উপাখ্যান।
একপ্রান্ত আগলে সাবধানী ব্যাটিং করে যান মুশফিক। অপরপ্রান্তে নিজ ঢংয়ে সাবলীল ব্যাটিং করে যান মুমিনুল। ৫৯ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। ৯৬ বলে ছুঁয়ে ফেলেন তিনঅঙ্ক। দেশের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম শতক। লর্ডসে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম।
মুমিনুলের ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি এটি, তখন ১৩ বাউন্ডারি নামের পাশে। পরের পঞ্চাশ করতে খেলেন ৭৪ বল, বাউন্ডারি একটি। শেষপর্যন্ত ২০৩ বলে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ১৬টি চারের সঙ্গে আছে একটি ছক্কার মারও। আর মুশফিক ১৯২ বলে ৯২ রানে ফেরেন, ১০চারে সাজিয়ে।
বাংলাদেশের শেষ দুটি উইকেটের পতন শেষবেলায় বলেই আক্ষেপ বাড়াচ্ছে। তামিম আউট হয়েছিলেন প্রথম ঘণ্টার পানি পানের বিরতির পরপরই। ইমরুল ফেরেন লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার শেষ ওভারে। দুটি উইকেটই আক্ষেপ হয়ে থেকেছে। শেষে জোড়া আক্ষেপ যুক্ত হয়েছে।
তবে আশারপ্রদীপ হয়ে আছেন দুই নির্ভরতা। যাদের ব্যাট সদেখাচ্ছে বড় কিছুর স্বপ্ন। ম্যাচ শুরুর আগে চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। স্পিন দুর্গের জুজু অবশ্য প্রথমদিনে দেখা যায়নি। অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট অভিষেকে টস জেতা মাহমুদউল্লাহ দ্বিতীয় দিনে মুমিনুলকে সঙ্গী করে সেই জুজুটা আরও দূরে ঠেলে দেবেন, সেটাই এখন প্রত্যাশা।