চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জয় দিয়েই শেষ করলেন মালিঙ্গা

শ্রীলঙ্কাকে দারুণ এক জয় উপহার দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন লাসিথ মালিঙ্গা। বিদায়ী ম্যাচে বল হাতে রাখলেন দারুণ অবদান। তুলে নিলেন তিন উইকেট। বাংলাদেশ ইনিংসের ভাঙন তো ধরালেনই; শেষের পেরেক ঢুকিয়ে বীরের মতোই ছাড়লেন মাঠ। দারুণ দুই ইয়র্কারে শুরুতেই সাজঘরে পাঠান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারকে। শ্রীলঙ্কার জয়ের সূর্য ঝলমলিয়ে ওঠে তখনই। শেষে মোস্তাফিজুর রহমানের উইকেট তুলে বাংলাদেশকে ৯১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে হাসিমাখা মুখেই ছাড়েন প্রেসাদাসা স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচা।

৩১৫ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ২২৩-এ। রয়ে যায় ৫০টি বল। ৩৯ রানের ৪ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমানের পঞ্চম উইকেট জুটির ১১১ রান লড়াইয়ের আভাস দিলেও তাদের বিদায়ের পর কেউই ধরতে পারেননি ম্যাচের হাল।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

মুশফিক ৬৭ ও সাব্বির করেন ৬০ রান। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান আসে ১১ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাটে। এ বাঁহাতির ১৮ রানের ইনিংস হারের ব্যবধানই কেবল কিছুটা কমিয়েছে।

চোট ও বিশ্রামের কারণে শ্রীলঙ্কা সিরিজে স্কোয়াডের বাইরে থাকা বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারের অভাব প্রতিফলিত হয়েছে মাঠে। মাশরাফীর নেতৃত্ব, সাকিবের ব্যাট-বলে দ্বৈত ভূমিকা, সাইফউদ্দিনের বোলিং এমনকি লিটনের ব্যাটিং। এই চার ক্রিকেটারের বিকল্প হিসেবে কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।

৩১৫ রান তাড়ার কঠিন পথ পাড়ি দিতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। ৩৯ রান তুলতেই হারায় চার ব্যাটসম্যানের উইকেট। ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা লাসিথ মালিঙ্গা সাজঘরে পাঠান দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারকে। মোহাম্মদ মিঠুনকে ফেরান আরেক পেসার নুয়ান প্রদীপ। লাহিরু কুমারা প্রথম ওভারেই ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে (৩)।

 

রানের খাতা খোলার আগেই বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবালকে বোল্ড করেন মালিঙ্গা। দলীয় ৩০ রানের মাথায় মিঠুন এলবিডব্লিউ হন প্রদীপের বলে। আউট হওয়ার আগে এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান করেন ১০ রান। পরের ওভারে সৌম্যকে বোল্ড করেন মালিঙ্গা। এ বাঁহাতি ২২ বলে একটি চারের সাহায্যে করেন ১৫ রান।

ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে মালিঙ্গা ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে দেন মাত্র ১২ রান। নেন দুটি উইকেট ও দুটি মেডেন ওভার। বিদায়বেলায় এ পেসারের জাদুকরী বোলিং বাংলাদেশকে ঠেলে দেয় অনেকটাই ব্যাকফুটে। শেষপর্যন্ত ৯.৪ ওভারে ৩৮ রান খরচায় নেন তিন উইকেট।

বাংলাদেশের শুরু এবং শেষের বোলিং ছিল দেখার মতো। মাঝের বড় সময়টাতে নির্বিষ বোলিং আর দুর্বল ফিল্ডিংয়ের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার সাবলীল ব্যাটিং। বিশেষ করে কুশল পেরেরার ১১১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটি। তাতে স্বাগতিকদের সংগ্রহ প্রত্যাশিতভাবেই ছাড়িয়েছে তিনশ। প্রেসাদাসায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ৩১৫ রান।

৪০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তোলে ২৪৫। তখন মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশ করে ফেলাও অসম্ভব নয়। স্লগওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ও শফিউল ইসলাম দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিলে ৩১৪ রানে থামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। তারা হারায় ৮ উইকেট। শেষ ১০ ওভারে তোলে ৬৯ রান।

শফিউল তিনটি ও মোস্তাফিজ নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন ও সৌম্য সরকার।

শেষে ভাল বোলিং করলেও মোস্তাফিজ এ ম্যাচে ছিলেন সবচেয়ে খরুচে। ১০ ওভারে দেন ৭৫ রান। প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা শফিউল দেন ৯ ওভারে ৬২। বিশ্বকাপে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সৌম্য সরকারের ইকোনমি সবচেয়ে ভাল। ৫ ওভারে দেন মাত্র ১৭ রান।

নিজের শততম ওয়ানডে ম্যাচকে স্মরণীয় করতে পারেননি রুবেল। ৯ ওভারে ৫৪ রান দিয়েছেন। এছাড়া মিরাজ ৯ ওভারে ৫৬, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৭ ওভারে দেন ৪৫। কাঁধের চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর বল হাতে নেয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেন ১ ওভার। দেন ৪ রান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার শুরুটা ছিল ধীরগতির। রানের চাকা সচল হতে শুরু করে প্রথম উইকেট পড়ার পর। তিনে নামা কুশল প্রেসাদাসার ২২ গজে নামতেই ঝড়ের বেগে আসতে থাকে রান। এ বাঁহাতি মাত্র ৮২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে শ্রীলঙ্কাকে দেখান বড় সংগ্রহের পথ।

বোলারদের শাসন করে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। ৯৯ বলে ১১১ রান করে সৌম্যকে  উইকেট দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। এ বাঁহাতির ইনিংসে ছিল ১৭টি চার ও একটি ছয়ের মার।

এছাড়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ৪৮, কুশল মেন্ডিস ৪৩, লঙ্কান অধিনায়ক ও ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে করেন ৩৬ রান। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষবার ব্যাট হাতে নামা লাসিথ মালিঙ্গা ৬ রানে থাকেন নট আউট। যদিও তার মূল কাজটা বোলিং। ১৫ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২২৬ ম্যাচ নামের পাশে ৩৩৮ উইকেট তুলে বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে। শেষটাও জয়ে রাঙিয়ে। চওড়া হাসি তো তার মুখেই ভাল মানায়!