চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জয়ে অধিনায়ক মাশরাফীকে ‘বিদায়ী’ উপহার

লিটনের ১৭৬, তামিমের অপরাজিত ১২৮, দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ডবন্যার সাথে বিশাল পুঁজি গড়ে জিম্বাবুয়েকে সাড়ে তিনশর কাছের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। মঞ্চটা গড়া হয়ে যায় তাতেই। এই ম্যাচ দিয়ে অধিনায়কত্বের ইতি টানা মাশরাফীকে পরে বৃষ্টি আইনে ১২৩ রানের দাপুটে জয়ে বিদায়ী উপহার দিয়েছে লাল-সবুজের দল।

প্রথম ইনিংসের সময় বৃষ্টি বিরতিতে ৭ ওভার কমে আসা ম্যাচে সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২২ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি আইনে সফরকারীদের পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ৩৪২। জিম্বাবুয়ে ৩৭.৩ ওভারে যেতে পারে ২১৮ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ-৩২২/৩ (৪৩), জিম্বাবুয়ে-২১৮ (৩৭.৩)

গত সপ্তাহে সিরিজের একমাত্র টেস্টে সাড়ে তিনদিনে জেতা টাইগাররা আত্মবিশ্বাসে অনেকটা এগিয়ে থেকে প্রথম ওয়ানডেতে তুলেছিল ১৬৯ রানের বিশাল জয়। পরের ম্যাচে লড়ে এনেছে ৪ রানের জয়। এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতেছে সিরিজ। শুক্রবার সম্পূর্ণ করল হোয়াইটওয়াশ।

সঙ্গে নেতৃত্বে জয়ের ফিফটি পূর্ণ করেছেন ম্যাশ। তার অধীনে ৮৮ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ঠিক ৫০টিতে। সাফল্যের হার ৫৭.৬৪ শতাংশ। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৪ রানে ৫৮৭ রানও আছে তার অধিনায়ক হিসেবে। টেস্টে একটি ও টি-টুয়েন্টিতে ২০ ম্যাচে ১০ জয় আছে মাশরাফীর অধিনায়ক হিসেবে।

মাশরাফী অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে নিয়েছেন এক উইকেট। বিশ্বের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়ক হয়ে একশ বা তারবেশি উইকেট নিয়ে শেষ টানলেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তার নামের পাশে ১০২ উইকেট থাকল। ওয়ানডেতে অবশ্য ২৭০ উইকেট ম্যাশের, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

পাহাড়সম সংগ্রহের জবাব দিতে নেমে মাশরাফীর তোপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। টিনাশেকে (৪) উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ব্রেক থ্রু আনেন মাশরাফী। ১৪ রান করা টেলরকে ফেরান সাইফউদ্দিন। জেঁকে বসতে যাওয়া অধিনায়ক উইলিয়ামসকে (৩০) বোল্ড করে সেখান থেকে সাফল্য আনেন অভিষিক্ত আফিফ।

চাকাভাকে (৩৪) বোল্ড করে শিকারের উল্লাসে যোগ দেন তাইজুল। চেপে বসতে চেষ্টা করা মাধভেরেকে (৪২) মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে সাইফউদ্দিন পান দ্বিতীয় সাফল্য। সেই মিরাজই রান আউটে সাজঘরে পাঠান মুতুম্বামিকে।

বেরিয়ে পড়া টেলে পরের আঘাত দারুণ বল করা মোস্তাফিজের। টিনোটেন্ডাকে স্লিপে ক্যাচ বানান কাটার মাস্টার। ত্রিপানোকে (১৫) বোল্ড করে তাইজুল আনেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। কাটা হয়ে থাকা সিকান্দার রাজাকে (৬১) বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ বানিয়ে শেষের খুব কাছে আনেন সাইফউদ্দিন। পরের বলে এক ইয়র্কারে তাসুমাকে বোল্ড করে শেষ টানেন তিনিই। ৪১ রানে ৪ উইকেট সাইফের।

আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটে নেমে শুক্রবার সাবধানী শুরু করে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে তামিম-লিটন তোলেন ১০ ওভারে ৫৩ রান। ধীরে ধীরে হাত খুলতে থাকেন দুজনে।

রানের গতি বাড়িয়ে দুজনে যখন এগোচ্ছিলেন বড় সংগ্রহের দিকে, ৩৩.২ ওভারের সময় নামে বৃষ্টি। ততক্ষণে উদ্বোধনীতে পৌনে দুইশত রানের জুটি গড়ে ফেলেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। গড়েন ওপেনিংয়ে জুটির রেকর্ড।

প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন পথে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক তুলে নেন। ১১৪ বলে ১৩ চারে তিনঅঙ্কে নাম লেখান। ১০২ রানে অপরাজিত থেকে বৃষ্টি বিরতির পর মাঠে আসেন লিটন। ফিরে চালান তাণ্ডব।

ডাবল সেঞ্চুরির আশাও জাগিয়েছিলেন লিটন। শেষপর্যন্ত পারেননি। ১৪৩ বলে ১৬ চার ও ৮ ছক্কায় ফিরেছেন ১৭৬ রান করে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। গত ম্যাচে তামিমের ১৫৮ রানকে টপকে গেছেন। গত ম্যাচে তামিমের ৭ ছক্কা ছাড়িয়ে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ ছক্কার দেশি রেকর্ডও গড়েছেন ডানহাতি ওপেনার।

অন্যপ্রান্তে গত ম্যাচে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলা তামিম ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখা পান। ৬০ পঞ্চাশ ছুঁয়ে ৯৮ বলে শতক, শেষে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ৭ চার ও ৬ ছক্কায় ১০৯ বলে সাজানো ইনিংস। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি।

প্রথমবার কোনো ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। তাদের হয়েছে দুই রেকর্ড। উদ্বোধনীতে বিদ্যুৎ-অপির ২১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙেছেন তামিম-লিটন জুটি। ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ, ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মেরিল কাপের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭০ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহরাব হোসেন অপি।

দুই দশক আগের রেকর্ড টপকে তামিম-লিটন সিলেটে লিখলেন নতুন ইতিহাস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ওপেনিং জুটিতে ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে দুজনে যোগ করেন ২৯২ রান।

তাতে তামিম-লিটন গড়েছেন ওয়ানডেতে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও। দুজনে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন তিনশর কাছে। এর আগে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২২৪ রানের জুটিটি ছিল টাইগারদের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ।

ডাবল সেঞ্চুরি না পেলেও লিটন বিশাল সেঞ্চুরি দিয়ে হয়েছেন চার রেকর্ডের মালিক। প্রথমটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের কীর্তি তো অবশ্যই, পরের দুটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটির অংশীদার, ওপেনিং ও যেকোনো উইকেটে। সঙ্গে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কা ও সর্বোচ্চ বাউন্ডারির রেকর্ডটিও এখন তার।

আগের ম্যাচে ১৫৮ রানের ইনিংসের পথে ৭ ছক্কা মেরেছিলেন তামিম, লিটন এদিন মেরেছেন ৮ ছক্কা। যা এখন বাংলাদেশের এক ম্যাচে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছক্কা। সঙ্গে ১৬ চার মিলিয়ে ২৪ বাউন্ডারি মেরেছেন ডানহাতি ওপেনার। যা সর্বোচ্চ। গত ম্যাচে তামিমের ২৩ বাউন্ডারি ছিল আগের সর্বোচ্চের দেশীয় রেকর্ড।

শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ ৩ ও অভিষিক্ত আফিফ ৪ বলে ৭ রানে ফেরেন।