বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় যদি আমি জড়িত থাকি, তাহলে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি।
আজ বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে চ্যানেল আই’কে এসব কথা জানান মেয়র সাদিক।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, আমি আমার পদত্যাগপত্র দিয়ে দেবো। আমি পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছি।
মেয়র সাদিক আরও বলেন, এ ঘটনার অবশ্যই জোরালো তদন্ত চাইব এবং অবশ্যই আমরা আইনের আশ্রয় নেব। মেয়র হিসেবে এভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। আমি মেয়র হিসেবে তাহলে ব্যর্থ। আমাদের ঘরের শত্রু বিভীষণ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে শপথ পড়িয়েছেন, আমার বাবা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
মেয়র সাদিক বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী আমার ফুপু হন। আমি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারলাম। আমি কোন কিছু করি নাই। আসলে আমি কষ্ট পেয়ে লজ্জায় ঘটনাস্থল থেকে বাসায় চলে আসি। প্যানেল মেয়রদের রেখে আসি, যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। পরে শুনি পুলিশ গিয়ে আমার নেতাকর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করেছে।
‘শত শত লোক আহত হয়েছে। এমন হলে আমি কীভাবে কী করব? আমাকে এমনভাবে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? আমাকে কেন কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না?’
অন্যদিকে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৩০-৪০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ইউএনও নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেন। অন্যদিকে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক আরেকটি মামলা করেছে।
নেত্রীর নির্দেশে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন বরিশালে ইউএনওর বাসায় হামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে। নেত্রীর নির্দেশে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আজ বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ১৫ আগস্ট উপলক্ষে স্মরণসভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি এই অনুষ্ঠানে আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। বরিশালের প্রশাসনকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে। আমি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও কথা বলেছি। পুলিশ জানিয়েছে তারা ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দোষীদের ধরতে অভিযান চলছে।’
‘নেত্রীর নির্দেশে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’, বলেন কাদের।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভূঞা জানান, ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠে থাকবেন অতিরিক্ত ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এর আগে গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে শোক দিবসের ব্যানার খুলতে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ সময় ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা-কাটাকাটি হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। এসময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।
সংঘর্ষের পর ইউএনও কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ফের ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন।
এসময় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনার পর থেকেই থমথমে বরিশাল নগরী।