চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জ্বলছে দিল্লি, অগ্নিগর্ভ ভারত

জ্বলছে দিল্লি। অগ্নিগর্ভ ভারত। কিন্তু এমনতো হওয়ার কথা ছিলো না। পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক ‘one country two nation’ থিউরির উপরে দাঁড়িয়ে ভারতের জন্ম হয়নি। ভারতের জন্ম হয়েছিলো স্যাকুলারিজমের উপরে ভিত্তি করে। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই পাবেন সম অধিকার। ভারতে সাংবিধানিকভাবেই যে অধিকার স্বীকৃত। যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে বিশ্বকবি রচিত ভারতের জাতীয় সংগীতেও। 

‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিস মাগে,
গাহে তব জয়গাঁথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে॥

অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানি
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে॥”

কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাই তার উল্টো পথে যাত্রা। নরেন্দ্র মোদির বিজেপির উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদের করাল গ্রাস আচ্ছাদিত করে ফেলেছে ভারতের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ,ভারতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতৃত্বে দেয়া দল কংগ্রেস আজ দীপ্তিহীন। কোনমতে টিকিয়ে রেখেছে অস্তিত্ব নিকষ অন্ধকারে মাটির পিদিমের মতো টিমটিম করে। সে জায়গাটি প্রবলভাবে দখল করে নিয়েছে ডানপন্থী বিজেপি।

একথা সন্দেহাতীত যে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটেছে উগ্র জিহাদীপন্থীদের আস্ফালনের কাউন্টার ন্যারোটিভ হিসেবে। যার মূলে রয়েছে প্রগতিশীল ও বামপন্থী দলগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতা। পশ্চিমবঙ্গের কথাই বলি, তিন দশকের বামপন্থী শাসন আজ শুধু ইতিহাস মাত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উগ্রপন্থী জিহাদি গ্রুপগুলোর প্রতি ভোটের রাজনীতির স্বার্থে নমনীয় মনোভাব বিরূপ প্রতিক্রিয়া জন্ম দিয়েছে সাবেক বামদের মধ্যেও। যার কারণে আজ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি উদারপন্থী ভাবধারার তীর্থভূমি খ্যাত কলকাতার রাস্তায়ও সগর্বে শোনা যায় গেরুয়া বাহিনীর পদচারণা। অবাক হবো না অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গও বিজেপির স্ট্রংহোলে পরিণত হলে।

ভারতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগমনের দিন থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার কুশীলবরা হয়তো ভেবেছিলেন, এই সহিংসতার মাধ্যমে তারা বিশ্বের দরবারে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন নিজেদের অসন্তোষের কথা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত স্ট্র্যাটেজি যেটি মিসফায়ার করতে বাধ্য। কারণ আইএস, আল কায়েদা ইত্যাদির ফলে আমেরিকানদের মনে যে মুসলিম বিদ্বেষ বা আতংকের জন্ম হয়েছে, সেটিকেই ক্যাশ করে ট্রাম্প এখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি। এসব সহিংসতা দেখে বরং উনাকে বোঝানো সহজ হবে যে, ভারতে জঙ্গি জিহাদিদের ব্যাপক উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে নরেন্দ্র মোদির প্রতি উনার আস্থা বাড়বে বৈ কমবে না। কারণ দুজনই যে একই গোডাউনের প্রোডাক্ট।

ইতিমধ্যেই শুনলাম ১৮ জন মারা গিয়েছেন পুলিশ, বিজেপি, বিক্ষোভকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে। আহত শতাধিক। আতঙ্ক সীমানা পেরিয়ে গ্রাস করেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেও। বাবরি মসজিদের দুঃসহ স্মৃতি আজো মনে গেঁথে আছে তাদের অনেকেরই। যেখানে মিথ্যা স্ক্রিনশট ছড়িয়ে হামলার পায়তারা করা হয় যখন তখন, সেখানে এই ঘটনা নিয়ে যে একটি গোষ্ঠী এদেশে সহিংসতার প্রচেষ্টা চালাবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। চীনে উইঘুরে মুসলমানদের উপরে হামলা নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য না করলেও, ভারতের ব্যাপারে যে এদেশের একটি গোষ্ঠী মূহুর্তেই খড়গহস্ত হওয়ার চেষ্টায় রত হবেন, সেতো পরীক্ষিত সত্য।

সহিংসতার অবসান হউক। ৪৭ এ অনেক রক্ত বয়ে গেছে। যে ক্ষত শুকায়নি আজ পৌনে এক শতাব্দী পরেও। আর একটি ৪৭ এর পদধ্বনি শুনতে চায় না উপমহাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষেরা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)