চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

বন্যা কবলিত এলাকায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অনেক জায়গাতেই পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জামালপুর
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলার ১০১টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চলের পানিবন্ধি অধিকাংশ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। অব্যাহত আছে ত্রাণ তৎপরতা।

কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও আবারো বেড়েছে ধরলার পানি। গত ১০ দিন ধরে এই দুই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের। হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় খাদ্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বন্যা কবলিত হতদরিদ্র পরিবারগুলোর।

পাশাপাশি পানি বাড়া-কমার সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোর বাসস্থানের পাশাপাশি দেখা দিয়ে খাদ্য সংকটও।
সরকারি ভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

তিস্তা
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকাল ৬ টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রংপুর অঞ্চলের ৮টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলের কারণে তৃতীয় দফায় তিস্তা নদীর চর এলাকা গুলোতে লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, কোলকোন্দ, মহিপুর, গজঘন্টা ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার (হারাগাছ, বালাপাড়া, মধুপুর ইউনিয়ন) ও পীরগাছা উপজেলার ছাওলা, পাওটানা ইউনিয়ন নদীর চরবেষ্টিত ১১৩টি চর গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪০ মানুষ।

ব্যারেজের ভাটিতে থাকা লারমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, সির্ন্দুনা, সানিয়াজান, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষেরা বলেছেন, পানিবন্দি হয়ে অনাহারে থাকলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা।

সিরাজগঞ্জ
গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনার পানি ১১ সেন্টিমিটার কমেছে। পানি কমলেও শনিবার সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এবারের বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ বিভিন্ন বাঁধের উপর অশ্রয় নিয়েছে। সেই সাথে গবাদি পশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের ৩৪ হাজার ৬৮৪টি পরিবারের ১লক্ষ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ৩৫৬৫ হেক্টর জমির ফসল। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৬০টি ঘর-বাড়ি, সাড়ে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা ও বাঁধ তলিয়ে গেছে এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

পাবনা
পাবনায় পদ্মা -যমুনা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়া, সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেয়া দিয়েছে। এছাড়া এসব এলাকার নিচু এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে।

পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, যমুনা নদীর পানি নগরবাড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ২. ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে পদ্মা–যমুনা নদীর বামতীর সংলগ্ন বেড়া, সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলার অন্তত: ১৫টি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়া এসব এলাকার নিচু এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ও সাঁড়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।