চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জেঃ শফিউল্লাহর বাসায় গিয়ে জিয়াকে ইউনিফরম পরা অবস্থায় দেখেন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করা হয়। ভয়াবহ সেই দিনটির কথা উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে। জবানবন্দি থেকে পাওয়া যায় সেদিনের ভয়াবহতার চিত্র। জানা যায় ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন ৩২ নম্বরের বাড়িটির ভেতরে-বাইরে। সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে চ্যানেল আই অনলাইনের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব।

প্রসিকিউশনের ৪৮নং সাক্ষী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার আদালতকে জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘটনার সময় তিনি বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৫ই আগস্ট ভোর বেলা জেনারেল শফিউল্লাহ তাকে ফোন করে বলেন, শুনেছেন বঙ্গবন্ধু assainated হয়েছেন। তিনি হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন Are you sure? উত্তরে বলেন হ্যাঁ। তারপর কেবল প্যান্ট শার্ট পরে পায়ে হেঁটে জেনারেল শফিউল্লাহর বাসায় গিয়ে জেনারেল জিয়াকে ইউনিফরম পরা অবস্থায় দেখেন। ২-১ মিনিটের মধ্যে ব্রিঃ খালেদ মোশারফ তার মতোই casual dress পরে সেখানে উপস্থিত হন।

তাৎক্ষণিক আলোচনায় জানতে পারেন, মাত্র কয়েকটি আর্মি অফিসারদের হাতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো, এটি যেন আর্মিতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং ‘Strict discipline must be maintained in the service’. পরে তিনি বাসায় গিয়ে ইউনিফরম পরে এয়ার হেডকোয়ার্টারে আসেন এবং ফোর্সের সিনিয়র অফিসারদেরকে ডেকে এয়ারফোর্সে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

সকাল ৮.৩০টা-৯টার মধ্যে জেনারেল শফিউল্লাহর কাছ থেকে টেলিফোন পেয়ে ৪৬ ব্রিগেডের একটি অফিসে যান। সেখানে মেজর ডালিম এবং মেজর রশিদকে সশস্ত্র অবস্থায় ও তাদের সাথে কালো এবং খাকী পোশাক পরা আরো কিছু সৈনিককে দেখে। সেখানে সম্পূর্ণ Indisciplined অবস্থা বিরাজ করছিল। এর আগেই জেনারেল শফিউল্লাহকে জোর করে রেডিও সেন্টারে যেতে রাজি করানো হয়েছিল। সেখানে নেভি চিফও উপস্থিত ছিলো। যে কয়েকটি আর্মি অফিসার সশস্ত্র অবস্থায় ছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই Where on the edge of irrationality and tension. সামান্যতম Conformation of disagreement could have load to spree of killing. Under the circumstances, I was forced to go Radio Station and so was Admiral Khan.

একটি জীপে করে মেজর রশিদ ও মেজর ডালিম জেনারেল শফিউল্লাহকে ‘এস্কর্ট’ করে রেডিও সেন্টারের দিকে নিয়ে যায়। তারা পিছনে পিছনে রেডিও সেন্টারে যায়। তার পিছনেও সশস্ত্র আর্মি গাড়ি ছিল। রেডিও সেন্টারে গিয়ে একটি কক্ষে খন্দকার মোস্তাক এবং তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে বসা দেখেন। কে একজন বললেন তিন বাহিনীর প্রধানকে প্রেসিডেন্ট মোস্তাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। এই আনুগত্য পত্রটি তাহের উদ্দিন ঠাকুর লিখেন এবং এই আনুগত্য পত্রটি তাদেরকে পড়তে দেওয়া হয়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই আনুগত্যপত্র পড়তে বাধ্য হন তিনি। তারপর তাদেরকে এস্কর্ট করে বঙ্গভবনে নিয়ে যায়। দুপুরের কিছু আগে খন্দকার মোস্তাক প্রেসিডেন্ট হিসেবে বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন। বিকালে মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে প্রথম সারিতে মেজর রশিদের পাশে বসা তার স্ত্রীকেও দেখেন। আর কোন মহিলাকে দেখেননি। বিভিন্ন আলোচনা এবং মিটিং-এর অজুহাতে তাদেরকে বঙ্গভবনে আটকে রাখে। এই সমস্ত কিছু লক্ষ্য করে তিনি বিবেক পীড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে, এই অন্যায় এবং ষড়যন্ত্রমূলক প্রক্রিয়ায় থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় ভেবে ১৭ই আগস্ট সকাল ১০.৩০টায় কাউকে না বলে বঙ্গভবন থেকে চলে আসেন।

১৮ই আগস্ট ১০টার সময় বঙ্গভবনে গিয়ে তদানিন্তন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মাহবুবুল আলম চাষীর কাছে তার পদত্যাগপত্র পেশ করেন। কয়েকদিন পরে এক বিকালে প্রেসিডেন্ট মোস্তাক তাকে ডেকে পাঠায়। এবং বলে ‘আমি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত কিছুদিন পর জানাবো।’ পরে জেনেছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন তোয়াবকে জার্মানি থেকে এনে বিমান প্রধান করার সিদ্ধান্ত এর মধ্যেই নেওয়া হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে তোয়াবকে আনার জন্য মেজর রশিদকে জার্মানিতে পাঠানো হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রুপ ক্যাপ্টেন তোয়াব পাকিস্তান বিমানবাহিনী থেকে সবরকম বেনিফিটসহ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে জার্মানিতে অবস্থান করতে থাকেন।

এ কে খন্দকার আদালতকে আরো বলেন, ১৮ই আগস্ট জেনারেল শফিউল্লাহর অফিসে একটি মিটিং হয়। এই মিটিং-এ জেনারেল শফিউল্লাহ, জেনারেল জিয়া, ব্রিঃ খালেদ মোশারফ, কর্নেল সাফায়েত জামিল, কর্নেল মালেক, তিনি ও অন্যান্য সিনিয়র অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অফিসারসহ অন্যান্য যারা জড়িত ছিল তাদেরকে Chain of Command-এ নিয়ে আসা এবং they must be brought to book. এই মিটিংয়ে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে জানা গেল যে, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর ফারুক, মেজর রশিদ, মেজর শাহরিয়ার এবং আর যারা এই হত্যাকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল they must be brought to book. এরা ছাড়া এই হত্যাকাণ্ড এবং ষড়যন্ত্রের সাথে whole আর্মির আর কেউ জড়িত ছিল না। তোয়াবকে জার্মানি থেকে নিয়ে এসে বিমান বাহিনী প্রধান করা হয়। তাকে বিমান বাহিনী থেকে অবসর করিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে O.S.D করা হয়। পরে বিচারপতি সায়েম তাকে ডেকে বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করেন। তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শে তিনি তাতে সম্মত হন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার করা হয়।

৪৯নং সাক্ষী এডমিরাল এম এইচ খান
প্রসিকিউশনের ৪৯নং সাক্ষী এডমিরাল এম এইচ খান আদালতকে বলেন, তিনি পাকিস্তান থেকে ফেরত এসে প্রথম নৌ-বাহিনী প্রধান হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ফজরের নামাজের পর তার বাসার দক্ষিণ রাস্তার ওপারে সার্কিট হাউসের একটি বাসায় রেডিওর আওয়াজ থেকে একটি ঘোষণা শোনে ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, স্বৈরাচারি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে্। আর্মি ক্ষমতা দখল করেছে।’ এই খবর শোনার পর জেনারেল শফিউল্লাকে ফোন করে না পেয়ে ইউনিফরম পরে বিমান বাহিনী প্রধান এ কে খন্দকারের বাসায় যান। তিনি তখন নাইট ড্রেসে ছিলেন। তাকে বলেন আপনি শফিউল্লাহর বাসায় যান আমি আসছি। জেনারেল শফিউল্লাহকে বাসায় ঢোকার পর একজন জোয়ান ছাড়া আর কোন আর্মি দেখে নাই। জেনারেল শফিউল্লাহকে ডেকে দেবার জন্য বলে বৈঠকখানায় অপেক্ষারত অবস্থায় জেনালের জিয়াকে ফুল ইউনিফরমে বাগানে দেখে। জেনারেল শফিউল্লাহ casual পোশাকে নিচে নেমে এলে তাকে অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করি কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারে না। কিছুক্ষণ পর সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ আসে। জেনারেল শফিউল্লাহ পরে জানাবেন বলে তাকে নেভাল বেস, হাজী মহসীন যেতে বলেন। ৪৬ ব্রিগেডের অবস্থান তিনি জানতেন না। অনেককে জিজ্ঞাসা করে সেখানে পৌঁছে খুব বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখে।

এম এইচ খান এরপর জানান, শফিউল্লাহকে অনেক অস্ত্রধারী আক্রমণাত্মক হাবভাবে একটি রুমে ঘিরে রাখে। তখন যে আর্মি উচ্চস্বরে কথা বলছিল এবং সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিল তার নাম মেজর ডালিম বলে জানতে পারে। সেই মেজর ডালিম জেনারেল শফিউল্লাহকে এস্কর্ট করে রেডিও সেন্টারে নিয়ে যায়। তাদেরকেও পিছনে এস্কর্ট করে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়। রেডিও সেন্টারে গিয়ে খন্দকার মোস্তাককে দেখে। পরে অনেক আর্মি ও সিভিলিয়ানকে দেখে। কিছুক্ষণ পরে জেনারেল শফিউল্লাহকে আনুগত্য ঘোষণার একটি কাগজ দেয়। তিনি সেটা পড়ে তাদেরকে দিলে তারাও পড়েন। তারপর তাদেরকে বঙ্গভবনে যেতে বলেন, বঙ্গভবনে যায়। সেখানে অনেক আর্মি অফিসার দেখেন। মেজর ডালিম ছাড়া আর কাউকে চিনেন না। মেজর ডালিমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মেজর রশিদ ও মেজর ফারুককে নাম বলে তাদেরকে চিনিয়ে দেয়। জেনারেল জিয়া তাদের সাথে বঙ্গভবনে যায়।

বঙ্গবন্ধুর খুনীরা৫৫নং সাক্ষী লেঃ কর্নেল সৈয়দ আলী আনছার
প্রসিকিউশনের ৫৫নং সাক্ষী লেঃ কর্নেল সৈয়দ আলী আনছার বলেন, ঘটনার সময় তিনি কুমিল্লা-১ ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ডিং অফিসার এবং মেজর ডালিম টু আই সি ও মেজর হুদা অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন। সেই সময় মেজর আব্দুল আজিজ পাশা কুমিল্লায় ৩-ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। মেজর পাশা ক্যাপ্টেন হুদার ভগ্নিপতি ছিল। ১৯৭৪ সালে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে মেজর ডালিমের চাকরি চলে যায়। ১৯৭৪ সালের শেষের দিকে বজলুল হুদার ক্যাপ্টেন র‌্যাংকে ঢাকায় পোস্টিং হয়। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে গণভবন ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিরাপত্তা ডিউটির জন্য ক্যাপ্টেন বাশারের নেতৃত্বে প্রায় ১১০ জন সৈনিকের একটি কোম্পানি ঢাকায় পাঠায়। ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট সুবেদার মেজর আবদুল ওহাব জোয়াদারকে এ ফোর্সের বেতন দেওয়ার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পাঠায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সকালে রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা বলে ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’ ওহাব জোয়ারদার আনসারি লেফটেন্যান্ট ব্যাজ নিয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লা ফেরত যায়। জিজ্ঞাসা করলে বলে যে, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা তাকে এই র‌্যাংক পরিয়ে দেয়। আরো বলে যে, ১৫ই আগস্ট শেষ রাতে গণভবন থেকে গাড়িতে ৩২নং রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যায়। তার সামনেই বেগম মুজিব ও তার পুত্রবধূদের হত্যা করা হয়। হত্যার পর বাড়িতে লুটপাট হয়। সেই বাড়ির অপারেশনের নেতৃত্ব দেয় ল্যান্সারের মেজর মহিউদ্দিন, মেজর নুর এবং ক্যাপ্টেন হুদা। ওই অপারেশনে তাদের একজন সিপাহী নিহত এবং একজন আহত হয়।