আগামী জুলাই মাস থেকে কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এছাড়াও কানাডায় আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রদেশের প্রিমিয়ার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জুলাই মাস থেকে নতুন কর্ম পরিকল্পনা শুরু করেছে।
কানাডার প্রধান চারটি প্রদেশের অন্যতম আলবার্টার প্রিমিয়ার জেসন কেনি এক ঘোষণায় বলেছেন, আলবার্টা ১ জুলাই পুনরায় খোলার পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে চলে যাবে, যার অর্থ প্রায় সমস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়া হবে।
ঘরে সামাজিক জমায়েতের আবার অনুমতি দেওয়া হবে এবং বাইরের ইভেন্টে আকারের কোন সীমা থাকবে না। রেস্তোঁরা, বার এবং খুচরা আউটলেটগুলি আবারও পুরো ক্ষমতা নিয়ে চালাতে সক্ষম হবে। প্রাদেশিক মাস্কের আদেশও তুলে নেয়া হবে তবে জনসাধারণের যাতায়াতে পাবলিক ট্রানজিট এবং শহর-মালিকানাধীন ভবনের অভ্যন্তরে কিছু সেটিংসে এখনও মাস্কের প্রয়োজন হবে। তবে কেউ কোভিড পজিটিভ হলে তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
আলবার্টার প্রিমিয়ার জেসন কেনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং একটি দুর্দান্ত অর্জন, তবে আমরা এখানেই থামব না। তিনি আরো বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিবো যাতে করে আমরা কেবল গ্রীষ্মের জন্যই উন্মুক্ত নই, ভালোর জন্য উন্মুক্ত থাকবো।
অন্যদিকে কাউকে কানাডায় ঢুকতে হলে তাকে অবশ্যই পুরোপুরি ভ্যাকসিনেটেড হওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণপত্র প্রদর্শন করতে হবে। সেই ভ্যাকসিনও হতে হবে কানাডায় অনুমোদিত। কানাডা এখন পর্যন্ত চারটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো হলো অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন, ফাইজার ও মডার্না। এই ব্যবস্থা চালুর সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ সরকার ঘোষণা না করলেও জুলাইয়ের শুরুর দিকে এটি চালু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তঃসরকার বিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক লাব্লাঁ বলেন, ব্যবস্থাটি চালুর দিনক্ষণ নির্ভর করছে দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হার কি দাঁড়ায় তার ওপর। পূর্ণাঙ্গভাবে ভ্যাকসিনেটেড বা ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে সরকার প্রদেশগুলো ও বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সঙ্গে কাজ করছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত নথি প্রকাশ করা হতে পারে। তবে জুলাইয়ের গোড়ার দিকে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট যদি চালু করা নাও যায় তাহলেও হোটেল কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হবে। সেক্ষেত্রে অন্তবর্তী সময়ের জন্য ভ্যাকসিনেশনের পক্ষে সাময়িক কোনো প্রমাণপত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
হোটেল কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় পরিবর্তন হলে অনুমোদিত হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন ছাড়াই কানাডায় প্রবেশের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। ফেডারেল কর্মকর্তারা বুধবার এই ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, জুলাইয়ের শুরুর দিকে নতুন ব্যবস্থা কার্যকরের আশা করা হচ্ছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক যাত্রীরা কানাডায় প্রবেশের পর কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুযোগ পাবেন।
প্যাটি হাইডু বলেন, এখানে পার্থক্য যেটা তা হলো, ভ্যাকসিনের কোর্স সম্পন্ন করেছেন এমন যাত্রীদের সরকার নির্ধারিত হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। প্রবেশের প্রথম দিনই করা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুযোগ পাবেন তারা।
কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে দীর্ঘদিনের বিধিনিষেধ মুক্ত সামাজিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে প্রদেশটির জনগণ। বিশ্বাস করি অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুব দ্রুতই স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসবে, তবে নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতি উদাসীনতা মহতি উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্তও করতে পারে। তাই দ্রুত ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এসে জনগণকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
অ্যালবার্টার বাসিন্দাদের ভ্যাকসিন দিতে উত্সাহিত করার প্রয়াসের অংশ হিসাবে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে ওয়েস্টজেট এবং এয়ার কানাডার অফার করা আরও দুটি ১ মিলিয়ন ডলার ড্র এবং ৪০ টি ভ্রমণ পুরস্কার থাকবে।