টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের শালবন। নানা সংকটে তার ঐতিহ্য হারিয়েছে অনেক আগেই। সামান্য যতখানি টিকে আছে তাতে নেই আদি জীববৈচিত্র্যের সমন্বয়। সামাজিক বনায়ন, কৃষি ও বসতির আগ্রাসনে তাও বিলুপ্তির পথে! তবে দেরিতে হলেও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধির লক্ষে নানা প্রকল্প গ্রহণ করছে বনবিভাগ। প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হলে বন ফিরে পেতে পারে তার আদি ঐতিহ্য।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুর দোখলা রেঞ্জের গভীর বন। যেখানে মাথা ঊঁচু করে তাকিয়ে দেখতে হয় গাঢ় সবুজে আচ্ছাদিত সবুজ পাতার ফাঁকে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এখনও টিকে থাকা শাল, গজারিসহ অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষরাজি জানান দিচ্ছে শাল বনের নিজস্ব রূপের কথা। তবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে গর্জন, জাম, চাপালিশ, ঢেওয়া, লটকন, গাব, জামরুল, জলপাই, আমড়া, বেল, তেঁতুল, আমলকী, হরিতকী, বহেরা, অর্জুন, বকুল, মহুয়া, নাগেশ্বর, নিম, কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, পেয়ারা, কানাইডিঙ্গা, জয়না, নেউর, চিকরাশি, আজুলী, তালমূল, তেজপাতা, সোনাপাতা, নাগদানা, জায়ফল, রক্ত চন্দনসহ দেশি প্রজাতির অসংখ্য বৃক্ষরাজি। ফলে প্রাণীকুলের খাদ্য সংস্থানকারী ও বনের ভারসাম্য রক্ষকারী এসব বৃক্ষরাজি বিলুপ্তির সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে জীববৈচিত্র্যের অন্যতম অনুসঙ্গ পশু-পাখি সরীসৃপসহ নানা প্রজাতির প্রাণীও।
আবার প্রাণের সঞ্চার ও বনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পশু-পাখির খাদ্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মধুপুর গড়াঞ্চলের দোখলা রেঞ্জে ৮০ হেক্টর বনভূমিতে দেশি ৫৩ প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করছে বন বিভাগ। আর বন বিভাগের এই কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বন বিভাগের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ রেঞ্জে নার্সারী করে পরিবেশের সাথে মিল রেখে দেশি ৫৩ প্রজাতির ফুল, ফল, ভেষজ ও পরিবেশ সম্মত টেকসই বাগান তৈরি করা হচ্ছে। যার সুফল দুই বছরের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে দাবি বন বিভাগ টাঙ্গাইলের দোখলা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল আহাদের।
সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিবোর্ট (সুফল) প্রজেক্টের আওতায় দোখলা রেঞ্জের ৮০ হেক্টর বনভূমিতে প্রতি হেক্টরে দেশি ৫৩ প্রজাতির এক হাজার ৫০০ করে মোট এক লাখ ২০ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। টেকসই বাগান তৈরির এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শালবনের পরিবেশ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্যের আদি সক্ষমতা ও ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।