করোনার ভয়ে অনেকে যখন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে চার দেয়ালের মাঝে, তখন তিনি করোনা রোগীদের সেবায় ছুটে বেড়িয়েছেন পথে-প্রান্তরে। ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে যেকোন দুঃসাহসিক কাজ করা যায় তাই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী।
গত তিন মাসে তিনি সহস্রাধিক মানুষকে দিয়েছেন খাদ্য ও অর্থ সহায়তা। করোনায় মৃতদের দাফন এগিয়ে আসা গাউছিয়া কমিটিকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডার কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স।
কয়েকজন তরুণকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছেন করোনা আইসোলেশন সেন্টার। যা পরে রূপ নিয়েছে ট্রিটমেন্ট সেন্টারে। এর জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা, ডাক্তার, নার্সদের বেতনের ব্যবস্থা করা, করোনার নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন, এক্স-রে মেশিন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম, হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা যোগাড়ে ছিলেন সচেষ্ট। এই সেন্টারের প্রতি আস্থা রেখে সাড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
তরুণ আইনজীবী ও সুচিন্তা বাংলাদেশ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন: ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ আমরা কয়েকজন তরুণ নিজেরাই গড়ে তুলি করোনা আইসোলেশন সেন্টার। এই মহামারি যেহেতু সরকারের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না, তাই তরুণদের সাথে নিয়ে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন: চট্টগ্রাম করোনার প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে চট্টগ্রামের বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বেসরকারী হাসপাতালগুলো করোনা রোগী তো দূরের কথা, সাধারণ শ্বাসকষ্টের রোগীকেও ভর্তি না নেওয়ায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আসতো প্রতিদিনই। সামান্য অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাচ্ছিল। করোনা ছিল একটা আতঙ্ক। যখন করোনা হলেই সন্তান ছেড়ে মা-বাবা চলে যাচ্ছেন, মা-বাবাকে সন্তান রেখে আসছে গভীর জঙ্গলে। নিজের মা-বাবার সৎকারে সন্তানরা এগিয়ে আসছেন না, আত্মীয়স্বজন ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে করোনা হলে। এত এত অভিযোগ শুনে আমরা এগিয়ে আসি।
জিনাত সোহানা আরও বলেন: আমরা চিন্তা করলাম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটা আইসোলেশন সেন্টার করবো। যেখান থেকে সাধারণ রোগীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ, খাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবা পারবে। তবে শুরুর দিকটা বেশ সুখকর ছিল না। এই ক্ষেত্রে আমাদের কারো কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। নিজেদের মনোবল শক্ত রেখে শূন্য থেকে আমরা শুরু করি। প্রথম দিকে এই আইসোলেশন সেন্টার খুব উন্নত ছিলো না। পরে সেবার মান বাড়াতে উদ্যোক্তাদের সকাল-সন্ধ্যা মিটিং করি। প্রতিদিনই নিত্য নতুন সমস্যা সামনে আসে। তবে সব বাধা মোকাবেলা করে ধীরে ধীরে বেড়েছে এই আইসোলেশন সেন্টারের সেবার মান ও সুযোগ সুবিধা। এতে চট্টগ্রামের বিত্তশালীদের সম্পৃক্ত করি।
তিন তিন বারের কারা পরিদর্শকের দ্বায়িত্ব পালন করা জিনাত বলেন: আমরা মনে করি এই বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় তরুণদেরই এগিয়ে আসা উচিৎ। আমরাই প্রথম বাংলাদেশে বেসরকারী পর্যায়ে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার করেছি। পর্যায়ক্রমে এটা ট্রিটমেন্ট সেন্টারে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী ইনডোর, আউটডোরে সেবা নিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন।