রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারের কিছু শ্বেতপাথর উপড়ে ফেলা হয়েছে। কে বা কারা এই শ্বেতপাথর খুলে রেখেছে পুলিশ বা অন্য কেউ সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি। যাদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি।
পুলিশ জনিয়েছে, বিষয়টি জানার পর ওই পার্কের রক্ষণাবেক্ষেণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে। তারা এসে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলে সঠিক পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শেরেবাংলানগরে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মূল সমাধি ঘিরে রাখা বেষ্টনীর ওপরে নকশা হিসেবে বসানো কয়েকটি শ্বেতপাথর স্থানচ্যুত করে রাখা আছে। কবে কখন বা কারা এসব টাইলস উপড়ে ফেলেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জিয়ার মাজারে ক্লিনার হিসেবে নিয়োজিত মিজানুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজও মাজার পরিষ্কার করতে এসে টাইলসগুলোকে (শ্বেতপাথর) উপড়ানো অবস্থায় দেখি।’
তবে পুরো মাজার কমপ্লেক্সের আর কোথাও কোনো ক্ষতি চোখে পড়েনি। দর্শনার্থীদের কাউকে কাউকে আঠা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় টাইলসগুলো এমনিতেই খুলে গেছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কি ঘটেছে তা জানতে তদন্ত চলবে।
এরপর শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণেশ গোপাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের আর একটি দলও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন পার্কটির পাশেই রয়েছে একটি আনসার ক্যাম্প। ১৬ জন আনসার প্রতিরাতে পালাক্রমে পার্কে নিরাপত্তারক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেনের নির্দেশনায় আঙ্গুর ও তুহিন নামে দু’জন কর্মী দুপুর নাগাদ স্থানচ্যুত শ্বেতপাথর পুনস্থাপনের কাজ শুরু করেন।
বেলা পৌনে ২টার দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সহ-প্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স।
এ সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনা সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানাই।
প্রিন্স আরো বলেন, জিয়ার মাজারের কাছেই সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। এটি বিশেষ নিরাপত্তা এলাকা। আমাদের নেতাকর্মীদেরই এখানে আসতে বাধা দেওয়া হয়। তাই এখানে ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা বিস্মিত।
প্রতিহিংসা রাজনীতি কিনা খতিয়ে দেখতে হবে: বিএনপি মুখপাত্র
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, জিয়া উদ্যানের দেখভালের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। অবশ্যই সেই কাজে কোনো গাফিলতি আছে।
রাতের আঁধারে এই ঘটনার সাথে কর্তব্যে অবহেলাতো বটেই, প্রতিহিংসার রাজনীতি আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মুখপাত্র।
যাদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘেটেছে তাদের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
মাজারের যে ক্ষতি হয়েছে তা প্রতিস্থাপনে সরকার সব ধরণের সহযোগিতা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রিপন।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। এরপর তার লাশ চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করা হয়। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে এই উদ্যানে জিয়ার সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়।