রাত দশটা কি সাড়ে দশটা, ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের মাঝে মোবাইল ফোন বাজার শব্দ। এমন ম্যাচের মাঝে কারই বা ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করে! একবার দু’বার… তারপর কিছুটা বিরক্ত হয়েই ফোন ধরলাম।
ওপাশ থেকে একজন বললেন, আচ্ছা, কাল কি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। বললাম, ঠিক জানা নেই। এরপরই গুগলে ঢু দিয়েই সব তথ্য পেয়ে মাথা খারাপ। হায় হায়! ম্যাচের উত্তেজনায়তো মেইল চেক করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ বিটে কাজ করায় এসব খবরতো রাখতে হয়। কিন্তু, মেইল চেক করে কিছুই পেলাম না। তাহলে কি মেইল পাঠানো হয়নি? আবারো দেখলাম। হ্যাঁ, ঠিকই ২০ মার্চ জিল্লুর রহমানের প্রয়াণ দিবস। জন্ম ৯ মার্চ ১৯২৯, মৃত্যু ২০ মার্চ ২০১৩।
অনেক কিছুই ভেসে উঠলো। এই তো সেদিন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের জানাযায় যেদিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান অংশ নিয়েছিলেন, সেদিনই শুনেছিলাম, রাষ্ট্রপতির শরীরটা বিশেষ ভালো না। এর পরপরই শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হলে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
যখন তার মরদেহ আসে তখন এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে বঙ্গভবন পর্যন্ত কাভার করেছি। কিন্তু একজন সাংবাদিক হিসেবে ভুলে গেলাম, এতোবড় একজন মানুষের চলে যাওয়া?
শুধু কি তাই? ওয়ান ইলেভেনের সময়? যখন কেউ কথা বলে না, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কারাবন্দি অবস্থায়, কেউ তার মুক্তি চায় না, তখনও গুলশানের আইভি কনকর্ডে, দিনের পর দিন পাহারা, একটু তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা।
দিন শেষে উনি আমাদের হতাশ করতেন না। আওয়ামী লীগ সভাপতির মুক্তির দাবিতে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য এমন মানুষটাকে আমি ভুলে গেলাম!
কী করেননি জিল্লুর রহমান! জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দলের হাল ধরা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর সহধর্মিনী আইভি রহমানকে হারিয়ে যার সব কিছু হয়ে গিয়েছিলো এই আওয়ামী লীগ। তারপর ওয়ান ইলেভেনের কঠিন সময়। সব সময়ই তাকে নেতাকর্মীরা যেমন পাশে পেয়েছে, শুনেছি আমাদের অগ্রজ সাংবাদিকরাও তার সান্নিধ্য পেয়েছেন।
কিন্তু কি আশ্চর্য, তার মৃত্যুবার্ষিকীটাও আমি ভুলে গেলাম!
আমি তো সাংবাদিকতার সূত্র ধরে বলছি, কিন্তু কষ্টটা বাড়লো, যখন বারবার খোঁজ নিয়ে জানলাম, আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলও তার মৃত্যুবার্ষিকী সম্পর্কে অবগত নয়! যোগাযোগ করেছি অনেক নেতার সঙ্গে। শুনে তারা বলেছেন, ও তাই নাকি, কাল? শিওর? খুব হতবাক হলাম। আরো কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও খুব একটা আশাবাদী হতে পারলাম না। তার অর্থ এই দাঁড়ায়, ১৯ মার্চ রাত পর্যন্ত জিল্লুর রহমানের মৃত্যুূবার্ষিকীতে কোনো কর্মসূচি নেই আওয়ামী লীগের।
ততোক্ষণে রাত প্রায় সাড়ে এগারো। এতো রাতে আর কাকেই বা ফোন করবো, আর আমারই বা কিসের দায়িত্ব? মনে হলো, যে দলের জন্য জিল্লুর রহমান ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ তার দল আওয়ামী লীগও কি তার মতো মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী ভুলে গেলো?
পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ভৈরব তার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জিল্লুর রহমান কি শুধু ভৈরবের নেতা? সুসময়ে কি আমরা দুঃসময়ের মানুষদের কথা ভুলে যাচ্ছি?
থাক না এসব চিন্তা, এই বেশ ভালো আছি!
(সকাল ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ দপ্তর থেকে জানানো হয়, বেলা ১১টায় বনানী কবরস্থানে যাবেন তারা)
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের
নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে
প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)