চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাহাঙ্গীরনগরে জমজমাট শাড়ীর হাট

প্রতিদিন সকাল থেকেই বিশ্বিবিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যানে করে বিভিন্ন ধরণের শাড়ী, মেয়েদের শার্ট, প্যান্ট, ট্রাউজার, ওড়না, ফতুয়া, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা ইত্যাদি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সামনে হাজির হন দোকানীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্রেতা, জমজমাট হয়ে ওঠে হাট। বাইরের তুলনায় দামে খুব সস্তা হওয়ায় ক্রেতাদের আলাদা আগ্রহ থাকে সবসময়ই।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সংলগ্ন পিঠা চত্বরের পাশেই স্বল্প পরিসরে গড়ে উঠেছে এ শাড়ির হাট। তবে অন্যান্য হাটে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু পাওয়া গেলেও এ হাটে শাড়ী ও নারীদের পোশাক ছাড়া অন্য কোনো কাপড় কিংবা পণ্য মিলবে না। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে এ হাট। বিকালে আসলে হাটের পাশেই পিঠা চত্বরে বাহারি রকমের পিঠা পাওয়া যাবে। পিঠা চত্বর কিন্তু ক্যাম্পাসের একটি জমজমাট ও আড্ডাপ্রিয় জায়গা।

জানা যায়, প্রায় এক দশক আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনে গড়ে ওঠে এসব কাপড়ের দোকান। ফলে ছাত্রীদের কাছে এখানকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি এর সুনাম আশপাশের এলাকা সহ রাজধানীতেও ছড়িয়ে পড়ে। সময়ের পরিক্রমায় পোশাকের বৈচিত্রের পাশাপাশি বেড়েছে দোকানের সংখ্যা। ছাত্রীদের হলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পরবর্তীতে হাটটি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের পাশে স্থানান্তন করা হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ১৮টি ভ্যান দোকান রয়েছে। প্রতিদিন বিকেল বেলা এবং শুক্রবার ও শনিবার ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে জমজমাট হয়ে ওঠে এ বাজার। বাইরের তুলনায় এখানে সস্তা হওয়ায় সবার আগ্রহও বেশি থাকে ফলে বিক্রিও ভালো হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

দুই বছর যাবৎ এখানে শাড়ীর ব্যবসা করছেন শরীফুল ইসলাম। কম দাম এবং পণ্যের মানের নিশ্চয়তা প্রদান করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই সীমিত লাভে এখানে কাপড় বিক্রি করা হয়। এতে প্রচুর সাড়া পাওয়া যায়। অন্যদিকে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন থাকায় প্রচুর দর্শনার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসায় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেচা-কেনা অনেক ভালো হয়। তবে প্রশাসনের অসহযোগিতা এবং কিছুদিন আগে স্থান পরিবর্তনের কারণে আগের তুলনায় বিক্রি কিছুটা কমেছে বলে জানান তিনি।

এখানকার শাড়ীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে পাঁচ’শ থেকে শুরু করে তিন হাজারের মধ্যে বিভিন দামের শাড়ী পাওয়া যায়। শাড়ীর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের হাফসিল্ক ৬৫০ টাকা, তশরসিল্ক ৭০০ টাকা এবং সুুতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার। বিক্রেতারা জানান, অধিকাংশ শাড়ী টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জের তাঁত থেকে সরাসরি অর্ডারে আনা হয়। এমনকি বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডারেও শাড়ি সরবরাহ করা হয় এবং প্রচুর অর্ডারও পান বলে জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ওড়না ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, ট্রাউজার ১০০ টাকা, প্যান্ট ২০০ টাকা, শার্ট ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বিছানার চাদর এবং পর্দা কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা, সোয়েটার ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় পাওয়া যায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিতু সাহা বলেন, ‘ভাইভার জন্য শাড়িসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পোশাক প্রায় সময় এখান থেকে কেনাকাটা করে থাকি। অনেক কম দামে এখানে অনেক ভালো জিনিস পাওয়া যায়। এতে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে কেনাকাটার ঝামেলা কম পোহাতে হয়।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা নুসরাত উর্মি শাড়ি দেখতে দেখতে বললেন, ‘প্রায় সময়ই ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসলে এখান থেকে টুকটাক কেনাকাটা করা হয়। আর এত সস্তায় এরকম ভালো শাড়ি ঢাকায় পাওয়া যায় না বলে শাড়িই এখান থেকে সবচেয়ে বেশি কেনা হয়। এছাড়া পছন্দ মতো অর্ডার দিয়েও বেশকয়েকবার শাড়ি নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ছবি: সাবরিনা আলম রিয়া এবং মাহমুদল হক সোহাগ