জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফারজানা ইসলাম এ দায়িত্ব নেন।
রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিকের সঞ্চালনায় দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মনজুরুল হক, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, অফিস প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে পৃথকভাবে ফুল দিয়ে উপাচার্যকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিনাত রেহানা সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে পুনরায় চার বছরের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ এর ১১(১) ধারা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছরের জন্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘‘এ নিয়োগ আদেশ তার পূর্বের মেয়াদ উত্তীর্ণের পর যোগদানের তারিখ হতে কার্যকর হবে।’’
এর আগে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে সিনেট কর্তৃক তিন জনের উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নে ‘প্রথম’ হয়েছিলেন। অতঃপর ২০১৪ সালের ২ মার্চ তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর কর্তৃক চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে উপাচার্যকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মনজুরুল হক বলেন, ‘ সফলতার স্বীকৃতি স্বরুপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তিনি পুনরায় উপাচার্যের কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। কেননা সরকার মনে করেছেন তিনি যোগ্য। বিগত চার বছরে যেসব কাজ করেছেন খুব ভালোভাবেই তিনি করেছেন। আগামী চার বছরও সফলভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন আমরা আশা রাখি।”
জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম তার বক্তব্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপাচার্য বলেন, ‘বিগত চার বছর অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। হয়তো এটি বিগত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার স্বীকৃতি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে একযোগে কাজ করেছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
এসময় তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চার তীর্থস্থান। আমার প্রশাসন ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই, আমার প্রশাসন দল-মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ করেছে। এতদসত্তে¡ও বিগত সময়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব লাভ করায় ভুলত্রুটি সংশোধন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নেয়ার সুযোগ লাভ করেছি।’’
‘‘আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বে ‘মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। আমার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার, প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করি।’’
দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ শেষে দুপুরে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বিকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে অবস্থিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।