জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর ও শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে তৃতীয় দিনেও শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন অব্যাহত রয়েছে।
অনশনরত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে গতকাল রোববার থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিন শিক্ষার্থী। অনশনরত অবস্থায় তাদেরকে শহীদ মিনারের পাদদেশেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনের মুখে রোববার জরুরি সিন্ডিকেট ডাকেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। সিন্ডিকেট সভা শেষে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, মামলাটি এখন রাষ্ট্রের হাতে চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেখানে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে আমরা মামলা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করবো যেন কোনও নিরাপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হয়।
অনশনের বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী অনশন করছে তাদেরকে অনশন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ জানানো হবে।
জানা যায়, গতকাল রাতে অনশনরত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০তম আবর্তনের পূজা বিশ্বাস, ইংরেজি বিভাগের ৪২তম আবর্তনের সর্দার জাহিদ ও একই বিভাগের ৪২তম আবর্তনের তাহমিনা জাহান তুলি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে স্যালাইন দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক তৌহিদ হাসান বলেন, গত দুই দিন যাবত না খেয়ে থাকায় তাদের শরীরে প্রচুর পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে এবং রক্তচাপ কমে গেছে। শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বর্তমানে তাদেরকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা তাদের অবস্থানে অনড় থাকে।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত চার শিক্ষার্থীর অনশন অব্যাহত থাকলেও রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে অনশনে যোগ দিয়েছেন। অনশনে যোগদানকারী অারেক শিক্ষার্থী হলেন দর্শন বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের ফয়সাল আহমেদ রুদ্র।
শনিবার বেলা ২টার দিকে সর্দার জাহিদ একাই অনশনে বসেন। পরে বিকাল ৪টার দিকে পূজা বিশ্বাস তার সঙ্গে যোগ দেন। রাত ১২টায় যোগ দেন তাহমিনা জাহান তুলি, পরেদিন রোববার সকাল ১১ টার দিকে যোগ দেন খান মুনতাসির আরমান এবং সর্বশেষ রাতে যোগ দেন ফয়সাল আহমেদ রুদ্র। জাহিদ ও পূজার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও অন্য তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অনশনের দুই দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হননি বা তাদের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগও করেননি বলে জানিয়েছেন তারা।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রথম দিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।