চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাফর-ফাহিমরা হারিয়ে যাবে না, যদি..

বাংলাদেশি স্ট্রাইকাররা গোল পায় না, গোল করতে পারে না, এমন কথার ভিড়ে জাফর ইকবাল ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমদের আবির্ভাব যেন মরুর বুকে ফুল ফোটার মত। ভবিষ্যতের স্ট্রাইকারদের নিয়ে এখন প্রত্যাশার পারদটাও ঊর্ধ্বমুখী। তবে বাংলাদেশের ফুটবলে উঠতি তারকাদের নিয়ে যেমন মাতামাতির কমতি থাকে না, তেমনি ছুঁড়ে ফেলতেও লাগে না বেশি সময়! অপার সম্ভাবনার প্রতিভাগুলো সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যায় পূর্ণ ফুল হয়ে ফোটার আগেই। নিকট ভবিষ্যতে জাফররা যদি প্রত্যাশার চাপটা সামলাতে না পারেন, সঠিক পরিচর্যা না পান, হারিয়ে যাবেন না তো অন্ধকার অতলে?

সাইফুল বারী টিটোর মতে ভবিষ্যতের তারকা হয়ে জ্বলে ওঠা কিংবা অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রথমত নির্ভর করছে জাফর-ফাহিমদের নিজের ওপরই। চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচের মতে নিজেরা সচেতন হলেই দেশকে অনেককিছু দেওয়ার আছে জাফর-ফাহিমদের।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে আলো ছড়িয়েছেন। টুর্নামেন্টে খেলার আগে গত বছর জাতীয় দলের হয়ে ভুটানে খেলে এসেছেন জাফর। চলতি বছর খেলেছেন অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলের হয়েও। ঘরোয়া ফুটবলে খেলেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। এভাবে একই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ফুটবল খেলাটা ঝুঁকির। ভবিষ্যতে চাপ হয়ে উঠতে পারে জাফরের জন্য। পরিকল্পনা করে একটির পর একটি ধাপ পেরিয়ে এগিয়ে না গেলে হতে পরে বিপদও। এমন মত লাল-সবুজদের ফরোয়ার্ড জাফরের ক্লাব গুরু সাইফুল বারী টিটোর।

‘‌‌‌‌সে গত বছর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছে। চলতি বছর অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে খেলেছে। এখন আবার ১৮ দলের হয়ে পারফর্ম করেছে। ক্লাবেও খেলতে হয় তাকে। এভাবে খেলাটা তার জন্য খুবই চাপের। ঝুঁকিরও। জাফর যদি বয়সভিত্তিক ফুটবলে পর্যায়ভিত্তিক ভাবে খেলে ওপরের দিকে যেতে পারে, তাহলে তার খেলাটা ঠিক থাকবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে যেতে পারবে।’

যখন যে দলে ডাক পড়ছে, তখন সেখানেই জ্বলেছেন। ধারাবাহিকতায় সাফেও আরও একবার নিজেকে ছিনিয়েছেন জাফর ইকবাল। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে রানার্সআপ করার পাশাপাশি ৫ গোল করে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতাও। ভারত এবং ভুটানের বিপক্ষে পেয়েছেন জোড়া গোল। বাকি গোলটি মালদ্বীপের বিপক্ষে।

জাফরের পাশাপাশি ফাহিমও সাফে নিজের জাত চিনিয়েছেন। তার চোখ ধাঁধানো দুই গোলে কাতারকে হারিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের টিকিট প্রায় কেটেই ফেলেছিল লাল-সবুজ বাহিনী। গত আগস্টে নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে চার ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ৭ গোল করেছিলেন ফাহিম।

শিষ্যের এমন পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি টিটো। তাই অকুণ্ঠ প্রশংসা ফাহিমের জন্যও। চরম দুঃসময় পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য জাফর এবং ফাহিমদের পারফরম্যান্স অসাধারণ গর্বের আর আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ।

ফয়সাল আহমেদ ফাহিম

‘তাদের এমন খেলা দেখতে পারাটাও অনেক গর্বের। দেশের ফুটবলের জন্য দারুণ এক অনুভূতি। জাফর এমনই। ভালো খেলার ইচ্ছাটা তার মাঝে সব সময় থাকে। খুবই ইতিবাচক মানসিকতার একটা ছেলে। ফাহিমের খেলাটাও দেখলাম। দারুণ খেলেছে। তাকে যদি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা হয়, তাহলে আমরা ভাল একজন ফুটবলার পেতে পারি।’

বড়দের একের পর এক হারে ত্যক্ত-বিরক্ত বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে রীতিমত তারকায় পরিণত হয়েছেন জাফর এবং ফাহিম। তাদের রাতারাতি তারকাখ্যাতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শই দিলেন টিটো।

‘রাতারাতি স্টার বনে যাওয়া খুব একটা ভালো বিষয় নয়। ওদের নিজের মধ্যে এই দায়িত্ববোধটুকু আনতে হবে। ছেলেদের নিজেকে নিজেই বোঝাতে হবে। সামনে লম্বা একটা ক্যারিয়ার পড়ে আছে। অল্পতে খুশি হওয়া যাবে না। আগামীর জন্য খেলতে হলে তারকাখ্যাতি ভুলে গিয়ে কঠোর পরিশ্রমই করে যেতে হবে।‌‌‌‌’

পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে দেশের ফুটবলে ভবিষ্যতের বাঁকবদল সম্ভব বলে মনে করছেন টিটো।