দেশের বই পড়ুয়া, গণিত ভীতি কাটিয়ে ওঠা কিশোর-তরুণদের ‘জাফর স্যারের’ মুখে আজ মৃদু হাসি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইয়াসমিন হক।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং দেশের মানুষের শুভকামনায় ড. জাফর ইকবাল শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছেন বলেও জানান তিনি।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ড. জাফর ইকবালের সর্বশেষ অবস্থা জানতে সিএমএইচে আসেন।
১টার দিকে দুই মন্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে বিদায় জানিয়ে ড. ইয়াসমিন নিজেও হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
গাড়িতে ওঠার আগে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তার অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত। দেশের মানুষের শুভকামনা তিনি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, সিএমএইচ কর্তৃপক্ষের ওপর আমার আস্থা আছে।
তাকে বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইয়াসমিন বলেন: সিএমএইচ আন্তরিকভাবে তার চিকিৎসা-পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে তার চিকিৎসার কোনো ঘাটতি আপাতত নেই।
এর আগে সাংবাদিকদের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন: সাড়ে ৫টা কি পৌনে ৬টার দিকে আমাকে ফোন করে জানায়,‘আমার উপর একটা হামলা হয়েছে। আমি সুস্থ আছি, এখন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আমি চাই না, তোমরা টিভি দেখে খবর পাও, এজন্য আমি তোমাকে বলছি। ব্লিডিং হচ্ছে, আমি যদি পরে কথা বলতে না পারি, আমি ফাইন আছি।’
প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের কথা জানিয়ে ইয়াসমিন হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে (জাফর ইকবালকে) সিএমএইচে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিজে থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি শুনেছি, তিনি নিজে ফোন করে শিক্ষকদের কাছ থেকে জাফর ইকবালের খোঁজ নিয়েছেন।
ইয়াসমিন হকের বাবাও আর্মি মেডিকেল কোরের চিকিৎসক ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন: আমি এখানে স্বস্তি পাচ্ছি। জাফর ইকবাল সুস্থ আছেন। তার পরিচর্যা নেয়া হচ্ছে। আমার পুরোপুরি ভরসা আছে এখানকার চিকিৎসায়।
অধ্যাপক ইয়াসমিন বলেন, তার স্বামী মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন এবং শিগগিরই সুস্থ হয়ে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।
ধারাবাহিকভাবে হামলার হুমকি পাওয়ার পর এবং শনিবার ড. জাফর ইকবালের ওপর প্রাণঘাতি হামলার পরও দমে যাবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বছর বছর কাফনের কাপড় পাঠাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। তাহলে কি সব জিনিস বন্ধ করে আমরা জেলের ভেতরে থাকা আরম্ভ করবো? আমি মনে করি, আমরা আমাদের স্টুডেন্টসদের সঙ্গে ফ্রিলি ইন্টার্যাক্ট করব।
‘জাফর ইকবাল এজন্য পুলিশকেও শিক্ষার্থীদের বাধা না দিতে বলে আসছে। গতকালের ঘটনায় পুলিশ বেস্ট চেষ্টাটা করেছে।’
ড. জাফর ইকবাল মানসিকভাবে শক্ত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মানসিক অবস্থা খুব ভালো আছে। আই থিংক হি ইজ ইন দ্য বেস্ট অফ হ্যান্ডস। খুব শিগগির সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরবে বলে আশা করি।
শনিবার বিকেলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই হামলার শিকার হন দেহরক্ষী বেষ্টিত কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
আহত অবস্থায় সাথে সাথেই তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর শনিবার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে সিএমএইচে এনে ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।