জাতীয় ক্রিকেট লিগের ১৯তম আসরের শুরুটা ছিল ম্যাড়মেড়ে। মাঠের উত্তাপ কেড়ে নেয় সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি। অধিকাংশ ম্যাচের ভাগ্যেই লেখা হয় নিষ্প্রাণ ড্রতে। বিপিএলের কারণে পড়ে যায় দুই মাস বিরতি। তাতেই সাপে-বর হল! টি-টুয়েন্টি খেলে জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডে নেমে সবাই মাতলেন রান-উৎসবে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের দ্যূতি ছড়িয়ে নাসির, বিজয়, মেহেদী, মিরাজরা জাতীয় লিগকে করে তুললেন রঙিন!
শেষ রাউন্ডে ঢাকাকে ইনিংস ও ৪৯ রানের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করেছে খুলনা বিভাগ। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জয়ের রেকর্ডও গড়েছে রুপসা পাড়ের দলটি। তারকাসমৃদ্ধ দল নিয়ে শুরু থেকেই তারা ছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। প্রথম স্তর থেকে দ্বিতীয় স্তরে ওঠা আগেই নিশ্চিত ছিল রাজশাহীর। ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ড্র করে শেষ রাউন্ডে তারা অর্জন করেছে আরও দুই পয়েন্ট। অবনমন ঘটেছে ঢাকা বিভাগের।
জাতীয় লিগে প্রথম স্তরের চার দলের মাঝে থাকে শিরোপার লড়াই। শেষ রাউন্ড শুরুর আগ পর্যন্ত খুলনা, ঢাকা, রংপুর, বরিশাল ছিল শিরোপার দৌড়ে। তবে খুলনা অন্য দলগুলোর চেয়ে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় শিরোপার দাবিদার হয়ে গিয়েছিল খেলতে নামার আগেই। ড্র করতে পারলেই তাদের ভাগ্যে লেখা হয়ে যেত তা। সে সুযোগের অপেক্ষায় না থেকে জয় তুলেই শিরোপা অক্ষুন্ন রাখার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছিলেন তাদের টিম ম্যানেজম্যান্ট। জিতে ৮ পয়েন্ট তো পেয়েছেই সঙ্গে ইনিংস ব্যবধান করতে পারায় ১টি বোনাস পয়েন্টও যোগ হয়েছে তাদের থলিতে।
জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ড হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত নৈপুন্য প্রদর্শনের মঞ্চ। খুলনার ওপেনার এনামুল হক বিজয় করেন ডাবল (২০২) সেঞ্চুরি। লিগের শুরুতে আরও একটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান এ ব্যাটসম্যান। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে অফস্পিনার হিসেবে খেলা মেহেদী হাসান বিজয়ের সঙ্গে জুটি বেধে খেলেন ১৭৭ রানের ইনিংস। বিপিএল শুরুর আগে এবারের জাতীয় লিগেই ১৭৭ রানের আরেকটি ইনিংস খেলেছিলেন মেহেদী।
এই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৭ উইকেট নিয়ে বাজিমাত করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ঢাকা বিভাগের প্রথম ইনিংস গুঁড়িয়ে দেন ১১৩ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট তুলে ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে এই তরুণের হাতে। চারদিনের ক্রিকেটে প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেট পান ১৯তম জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডে এসে।
বরিশালের বিপক্ষে নাসির হোসেন খেলেছেন ২৯৫ রানের ইনিংস। মাত্র ৫ রানের জন্য দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের নাম তুলতে পারেননি রংপুরের এই ক্রিকেটার। তীরে এসে তরী না ডুবলে নাসির হতেন ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশে চলা প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান। ২০০৮ সালে সিলেটের বিপক্ষে বরিশালের হয়ে রকিবুল হাসান করেছিলেন ৩১৩। তার রেকর্ডটি অধরাই থাকল। নাসিরের সঙ্গে জুটি বেধে বিপিএলে নজরকাড়া পারমফরম্যান্স দেখানো আরিফুল হক করে গেছেন ১৬২।
শেষ রাউন্ডে রাজশাহীর ওপেনার মিজানুর রহমান সেঞ্চুরি করে তামিম ইকবালের কীর্তিতে ভাস বসিয়েছেন। ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে টানা তিনে ভাগ বসান মিজানুর। আগের দুটি রাউন্ডে তার সেঞ্চুরি সিলেট ও চট্টগ্রামের বিপক্ষে। ২০১২-১৩ মৌসুমে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন চট্টগ্রামের ক্রিকেটার তামিম। মিজানুরের সঙ্গে জুটি গড়েই নাজমুল হোসেন শান্ত খেলেছেন ১৯৪ রানের ইনিংস। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল থেকে বঞ্চিত হন ৬ রানের জন্য।
ওপেনিং জুটিতে মিজানুর-শান্ত যোগ করেন ৩৪১ রান। জাতীয় লিগে এটিই সেরা ওপেনিং জুটি। রাজশাহীর এই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন ফরহাদ রেজা। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ইয়াসির আলি চৌধুরী। সিলেটের বিপক্ষে চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে। এতসব কীর্তির মাঝে ১ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হতেও দেখেছে জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ড। রংপুরের বিপক্ষে ৯৯ রান করে আউট হন বরিশালের অলরাউন্ডার সোহাগ গাজী।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক: বিজয়ের মাসে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে ঝড়েছে রানের ফল্গু ধারা। জাতীয় লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৬ ম্যাচে ৮ ইনিংস খেলে করেছেন ৬১৯ রান। দুই ডাবলের সঙ্গে রয়েছে একটি ফিফটি। সর্বোচ্চ ২১৬। গড় ৭৭.৩৭। বিজয়ের পরেই আছেন মেহেদী। ৪ ম্যাচে ৭ ইনিংসে ব্যাট করে তুলেছেন ৫০১ রান। রয়েছে দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি। তৃতীয় অবস্থানে মিজানুর। ৭ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৪৯২ রান। তিনটি সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন একটি ফিফটি।
সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি: ৬ ম্যাচে ২১ নিয়ে শীর্ষে ফরহাদ রেজা। রাজশাহীর এই পেসার কোনো ইনিংসে ৫ উইকেট না পেলেও ছিলেন ধারাবাহিক। সেরা বোলিং ৮৬ রানে ৪ উইকেট। সমান ২০টি করে উইকেট নিয়ে ফরহাদের পরে দুই স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও নিহাদুজ্জামান।