চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাতীয় পার্টির অবাক রাজনীতি ও সিপিবির এরশাদ হয়ে ওঠা!

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছু রাজনৈতিক দলের অবাক কাণ্ড ও স্ববিরোধিতা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। যেমন একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করে পরবর্তিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করা। স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ক্ষমতার রাজনীতিতে এমন স্ববিরোধিতা ও অবাক কাণ্ড যেনো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে কিছু নেতার বিস্ময়কর আচরণ ও কিছু দলের স্ববিরোধিতা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক পতিত স্বৈরাচার হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সারাদেশে সকাল বিকাল মত বদলানোর ওস্তাদ হয়ে উঠেছে। কেউ কথা দিয়ে কথা না রাখলে অনেককেই ঠাট্টা করে বলতে শোনা যায়, “ব্যাটা এরশাদ হয়ে গেছে”। তার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যার হুমকি এখনো জনসাধারণের মাঝে মজাদার আলোচনার খোরাক হয়।

কিন্তু এবারের পৌর নির্বাচন ১৪ দলীয় জোটবদ্ধ নির্বাচন নয়। বহুদলীয় স্থানীয় নির্বাচন। এখানে ১৪ দল ইস্যুকে সামনে এনে বহুদলীয় স্থানীয় নির্বাচনকে জোট বদ্ধতায় আনার চেষ্টা কাম্য নয়।

পরবর্তিতে এরশাদ সকল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত তার আত্মহত্যার হুমকিকেও অস্বীকার করেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টি গেল। সরকার গঠনের সময় আবার নতুন নাটক। রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা হলো অর্থাৎ জাতীয় পার্টি হলো বিরোধী দল। এইসময়ে কিছু নেতা আবার মন্ত্রী হতে চেয়ে নীতি নৈতিকতা ও আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে উঠল।

১৪ দলকে এক প্রকার ব্ল্যাকমেইলিং করেই তারা মন্ত্রী হয়েছে। তাদের ভাবটা এমন ছিল আমাদের প্রত্যাশা পূরণ না করলে আমরা বিশদলে মিশে যাব। কতটা নির্লজ্জ ও নীতিনৈতিকতাহীন হলে একটা রাজনৈতিক দল, না সরকারি দল ও না বিরোধী দল হয়ে রাজনীতি করতে পারে!

বাংলাদেশে চলমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক যুদ্ধে জাতীয় পার্টি একটি দুষ্টক্ষত ও ব্ল্যাকমেইলার চক্র। ৫জানুয়ারির নির্বাচনে তারাই ছিল সেরা ব্ল্যাকমেইলার। আরেকটি বাম দল সিপিবির কিছু রাজনৈতিক ভূমিকাও জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে যখন বাকশাল হয় তখন তারাও পার্টিসত্তা বিলুপ্ত করে বাকশালে মিশে যায়। পরবর্তিতে বাকশাল হতে আওয়ামী লীগে প্রত্যাবর্তনেও সিপিবি আওয়ামী মিত্র ছিল। তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হয়ে কেউ কেউ বিএনপিতেও যোগ দিয়েছে। তারা তত্ত্ব দিয়েছে মন্দের ভালো হিসেবে আওয়ামী লীগই গ্রহণযোগ্য সংগঠন। হঠাৎ বদলে যায় তাদের মত। তাদের মুখ হতে বেরিয়ে আসে নতুন তত্ত্ব: নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ সব সাপের একই বিষ। তবে এখন অনেককেই বলতে শোনা যায়, “সিপিবিও এরশাদ হয়েছে। তারা মত, পথ বদলে বেশ পটু হয়ে উঠছে”।

বিএনপি জামায়াত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করল, সিপিবিও তাদের পথ অনুসরণ করল। বিএনপি জামায়াতের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গণতন্ত্র সম্মত হবেনা এমনটিই মত ছিল তখন সিপিবির। দেশজুড়ে এখন পৌর নির্বাচনের হাওয়া। সিপিবি দলীয় প্রতীকে এতে অংশ নিয়েছে। যেখানে তাদের প্রার্থী নেই সেখানে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোটও চাচ্ছে। তারা ১৪ দল হতে বেরিয়ে গেছে কোন কোন জায়গায় ১৪ দল ইস্যুতে নৌকা মার্কায় ভোটও চায় আওয়ামী নেতা তোষনে তৃপ্ত হতে।

সিপিবির স্ববিরোধিতা তাদের নিজেদের জন্য ও গোটা বাম রাজনীতির জন্য নেতিবাচক আবহ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক যুদ্ধের শেকড় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। সিপিবি গাছ লাগানোর বিরোধিতাও করেছে আবার সেই গাছের ছায়ায় বসে হাওয়াও খাচ্ছে। গাছের ডাল কেটে মাজন বানিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার চেষ্টাও করছে।

সুতরাং বলা যায় সিপিবিও এখন এরশাদ হয়ে গেছে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)