প্রো-পাকিস্তানি শাসক জিয়াউর রহমান তার দখলদারিত্বের শাসনামলে এক বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন।
ঘটনাটি ১৯৭৮ সালের ১২ ডিসেম্বর; জিয়াউর রহমান ভারী শিল্প জি.এম. প্ল্যান্ট উদ্বোধন করতে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। এই প্ল্যান্টটি সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে নির্মাণ করে দেয়।
প্লান্টের উদ্বোধন শেষে জিয়াউর রহমান তার বিশ্রামকেন্দ্র চট্টগ্রাম সার্কিট হাইজে ফিরে আসেন। সেখানে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-
‘‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিনেট অধিবেশনে কুরআন তেলওয়াতের আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ায় তোলপাড় করা বিএনপির নেতা ডা. ইউসুফ বলেন-
‘স্যার আমাদের পতাকায় ইসলামী রং নেই, এটা আমাদের ভালো লাগে না। এটা ইসলামী তাহজ্জীব ও তমুদ্দুনের সাথে মিলছে না।”
উত্তরে জিয়াউর রহমান বলেন-
“হবে, হবে, সবকিছুই হবে। আগে হিন্দুর লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদলানো হোক। তারপর জাতীয় পতাকার কথা ভাববো।”
এই ছিলেন জিয়াউর রহমান।
ধর্মকে ব্যবহার করে কি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হয় জিয়াউর রহমান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অনেকে হয়তো প্রশ্ন করবেন, তাহলে জিয়াউর রহমান জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকা পরিবর্তন করেননি কেন?
উত্তরটি সরল:
জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সবধরণের নোংরামি করেছিলেন কিন্তু তিনি ছিলেন সব সময় দৌড়ের উপর; তার প্রায় অর্ধ দশকের শাসনামলে ২০টি বিদ্রোহ সামলাতে হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক একটা চাপ সবসময় ছিল।
তাই, জিয়া জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকা পরিবর্তনের মতো দুঃসাহস দেখাবার ফুরসত পায়নি। পরে ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনাবিদ্রোহে মারা যাওয়ায় জিয়া এই অপকর্ম করার আর সুযোগ পায়নি।
ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে অসম্প্রদায়িক বাঙলা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল। সেই প্রত্যয়ের বুকে প্রাতিষ্ঠানিক ছুরিকাঘাত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। পদে পদে বাঙলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তিনি।
বঙ্গবন্ধু সরকার জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীর উত্তম’ দিয়েছিল জিয়াকে। কিন্তু তিনি কখনোই এর মর্যাদা রাখতে পারেননি বরং ভূলুন্ঠিত করেছে; নাগরিকত্ব বাতিল করার পরও একাত্তরের শীর্ষ দালাল বাংলাদেশের শত্রু গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুর্নবাসন করেছিল, আরেক শীর্ষ দালাল শাহ আজিজকে করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
গোলাম আজমের জামায়াত-শিবির একাত্তরে সরাসরি বাঙালি গণহত্যা অংশগ্রহণ করেছিল আর শাহ আজিজ জাতিসংঘে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে সাফাই গেয়েছিল, বলেছিল- মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের জারজ।
জিয়া তার দখলদারিত্বের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন ছিল, তার সবই ভূলুন্ঠিত করেছিল। তার প্রায় অর্ধদশকের শাসনামল বাংলাদেশকে বাংলাস্তান করার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে। আজকের বাংলাদেশে আদর্শিক দুর্দশার মহা ভিলেন- জিয়াউর রহমান।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)