আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে চ্যালেঞ্জ থাকলেও সাহস নিয়ে তা মোকাবিলায় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রোববার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছ থেকে শপথ নেয়ার পর সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাংবিধানিক শপথ গ্রহণ করার যে বাধ্যবাধকতা কিছুক্ষণ আগে আমরা সে শপথ গ্রহণ করেছি। আপনারা জানেন যে, শপথ গ্রহণের পরেই কিন্তু কার্যত আমরা পদে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকি। এই মুহূর্তে আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়ে গেছে। তারপরেও আরেকটা সত্য যে, আমরা এখনো আমাদের বাস্তব দায়িত্ব কার্যস্থলে গিয়ে গ্রহণ করিনি। আমরা সহসাই আমাদের কার্যস্থলে যাব আগামীকাল।’
‘‘তারপর আমরা সহকর্মীরা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করব। সংবিধান ও আইনে আমাদের ওপর কি কি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো জানবো। ভবিষ্যতে দায়িত্বটা কিভাবে পালন করব সেটা ঠিক এই মুহূর্তে বলতে পারব না। আরেকটু হৃদ্য হয়ে, আরেকটু লেখাপড়া করে জেনে তারপর আপানাদেরকে বলতে পারব।’’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে এই দায়িত্বটা যেন আমরা সঠিকভাবে, দক্ষতার সাথে শপথের প্রতি অনুগত থেকে পালন করতে পারি সে দোয়াটা চাচ্ছি। আমরা সমন্বিত ভাবে সহকর্মীরা বসে ঐক্যমত্য পোষণ করে সিদ্ধান্তগুলো নিব।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনই একটা চ্যালেঞ্জ। মানুষের জীবনটাও একটা চ্যালেঞ্জ। কোনো চ্যালেঞ্জই ভয় পেলে হবে না। চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হবে।’
এর আগে রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রথমে শপথ নেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর কমিশনার হিসেবে পর্যায়ক্রমে শপথ নেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন- ২০২২’ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে গঠিত সার্চ কমিটির অপর পাঁচ সদস্য ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
এই কমিটি দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করেন। সে সব বৈঠকে অংশ নেয়া অধিকাংশের দাবির প্রেক্ষাপটে ইসি গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রস্তাবিত তিন শতাধিক নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, সাবেক বিচারপতি, বিচারক, আইনজীবী, সাবেক আমলা, সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির নাম সেই তালিকায় উঠে আসে। তবে দুইবার সুযোগ দেয়ার পরেও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেনি।
এমন প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে মোট ১০টি নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে সার্চ কমিটি।
সেই নামের তালিকা থেকে গতকাল শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চারজন কমিশনারকে আগামী পাচ বছরের জন্য নিয়োগ দেন। ওইদিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হয়।