বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, ঐক্য প্রক্রিয়া মিলে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে তার বিজয় অনিবার্য বলে মন্তব্য করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন: বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এই দেশের মালিক দেশের জনগণ। আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি৷ আমরা দেশর মালিকানা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছি৷ সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না৷ আমাদের প্রথম দাবী সুষ্ঠু নির্বাচন।
বুধবার সিলেট রেজিস্ট্রি ভবন মাঠে ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল বলেন: আমরা যে ৭ দফা দাবি দিয়েছি তা বাস্তবায়নে আরো দৃঢ় ঐক্য হতে হবে। আপনারা মাঠে নামুন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। আজ নানা রকম বাধা অতিক্রম করে আপনারা জনসভায় এসেছেন৷ তার জন্য ধন্যবাদ৷
ড. কামাল বলেন: সংবিধানে আছে জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু মানুষকে মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই মালিকানা চাইলে জনগণের ঐক্য হতে হবে। জনগণকে বলতে হবে, আমরা ক্ষমতার মালিক।
তিনি বলেন: সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই এটাই আমাদের প্রথম দাবী। ৭ দফা দাবী নিয়ে গ্রামে গ্রামে, ইউনিয়নে, জেলায় জেলায় প্রচার করুন৷ ঐক্যকে শক্ত করুন।
‘‘আপনারা হালকা ভাবে নেবেন না। এত বড় জিনিস (দেশের মালিকানা) হারিয়ে গিয়েছে তা ফিরিয়ে আনা এত সহজ না। তার জন্য আপনাদেরকে আন্দোলনে শরিক হতে হবে। দেশের মালিকানা যেন দেশের মানুষ আবার ফিরে পায় তার জন্য আন্দোলন করতে হবে৷ আমরা অবশ্যই মালিকানা ফিরে পাবো।’’
তিনি বলেন: জনগণ মালিক না থাকলে স্বৈরাচারের প্রজা হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিলো ‘জনগণ ক্ষমতার মালিক’ তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের মালিকানা নিয়ন্ত্রণে আনবো।
ড. কামাল আরো বলেন: মুষ্টিমেয় মানুষের উন্নয়নকে দেশের উন্নয়ন বলে না৷ ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন হতে হবে। সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ক্ষমতার মালিক হতে চাই আমরা৷ ঐক্যফ্রন্টের বিজয় অনিবার্য।
সবশেষে তিনি বলেন: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা আমরা সবাই সমর্থন করেছি৷ তাকে মুক্তি দিতে হবে।
জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন: আজকে শাহজালালের এই পুণ্যভূমিতে ইতিহাস রচিত হয়েছে৷ আজ থেকে লড়াই শুরু হলো৷ এই লড়াইয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, তারেক রহমানসহ সবাইকে মুক্ত করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন: তফসিল ঘোষণার আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ সরকার দিন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন, ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না৷ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷
বিএনপি মহাসচিব বলেন: আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে৷ আসুন আমরা এই আন্দোলনে শরিক হয়ে ত্যাগ স্বীকার করি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মাধ্যমে আমরা দাবি আদায় করবো।
জেএসডি নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেন: দেশটা ডাকাতের হাতে পড়েছে। বাঁচাতে হবে৷খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। জনগণকে নিয়ে মাঠে নামতে হবে৷ সরকার উস্কানি দেবে৷ কিন্তু সরকারি উস্কানিতে পা দেয়া যাবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে। আজকে এতো বাঁধার পরও লাখো মানুষ। গত পরশু থেকে ধরপাকড় চালানো হয়েছে৷ তবু লাখো মানুষের উপস্থিতি সরকার ভয় পেয়েছে।
তিনি বলেন: এই লড়াই বাঁচার লড়াই, মানুষের লড়াই, ভোটের লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, গণফোরাম মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরসহ বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, ঐক্য প্রক্রিয়ার জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জনসভায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের কয়েকটি দল যেমন খেলাফত মজলিশ, কল্যাণ পার্টি, জাতীয় পার্টি (একাংশ) নেজামী ইসলামী, এলডিপির প্রতিনিধিও অংশ নেন ও বক্তব্য রাখেন৷
সকাল থেকেই ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দিতে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিছিল সহকারে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।
বুধবার দুপুর ২টায় সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রি মাঠে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ঐক্যফ্রন্টের সিলেট কর্মসূচির সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ পরিচালনায় সমাবেশটি শুরু হয়।
সমাবেশে আসার পথে এবং সমাবেশস্থলেও নেতাকর্মীদের আটক করা হয় বলে অভিযোগ করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা৷
এটি ছিলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর প্রথম জনসভা৷ ২৭ অক্টোবর দ্বিতীয় জনসভা অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামে৷
জনসভার আগে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ভোরে হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজার জিয়ারত করেন৷ ড. কামাল হোসেন গতরাতেই মাজার জিয়ারত করেন।