জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্ধারিত সূচি অনুসারে তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে অংশ নিচ্ছেন এবং অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে তিনি তার নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য দুটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
নানাবিধ কারণে বাংলাদেশ এখন আর কোনো হেলাফেলা করার মতো দেশ না। বিভিন্ন বৈশ্বিক সূচক, আভ্যন্তরীণ নানা কর্মকাণ্ড ও পদক্ষেপের জন্য সারাবিশ্বের নজরে এখন বাংলাদেশ। নেতিবাচক বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং ইতিবাচক বিষয় সারাবিশ্বে উপস্থাপন করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার যে ধারায় আছে বাংলাদেশ, তারই প্রতিফলন ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভাষণে।
জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি মানবিক প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের নানা তথ্য ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চার দফা প্রস্তাবনা দেবার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে তিনি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন।
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের সদিচ্ছার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন। মিয়ানমারের পেছনে কোন কোন রাষ্ট্র আছে, তা জেনেও রোহিঙ্গা সমস্যা কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
ভাষণে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’র কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানান তিনি। দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপে জাতিসংঘের উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি; এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন সরকার প্রধান। স্বাস্থ্য বিষয়েও তিনি বাংলাদেশের নানা পদক্ষেপ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসামের এনআরসি ও তিস্তার পানি বন্টনের অমিমাংসিত ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে দু’ নেতার বৈঠক সৌজন্যতার হলেও নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়েছে। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেক বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগোষ্টীর পক্ষেও বাংলাদেশের সাহসী অবস্থানের কথাও ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। আমাদের ধারণা, এইসব কূটনৈতিক পদক্ষেপ সামনের দিনগুলিতে ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে।
নানা কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট ভাষণের মাধ্যমে সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে, আর এই ধারা অব্যাহত রেখে দেশের আভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সমাধান হবে বলে আমাদের আশাবাদ।