বাংলাদেশ বাংলা ভাষা ও বঙ্গবন্ধু যে একসূত্রে গাঁথা তার প্রমাণ আজকের দিনে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি জাতি রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের এই দিনে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে সূচণা করেছিলেন বাঙালির আগ্রযাত্রার আরেক বৈশ্বিক মাইলফলক। তার আগে বাংলা ভাষা আন্দোলন ও সহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম ছিল বিশ্বের বিস্ময়। আর আজকের দিনে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে বঙ্গ ভাষণেরবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়ে আমাদের পালকে আরেকটি মুকুট স্থাপন করে দিয়ে যান। তিনি তার ভাষণে বিশ্বের নিপীড়িত জাতিস্বত্তার স্বাধীকার আন্দোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কিছু অংশ:
জনাব সভাপতি,
আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাঁহারা বিশ্বের সকল জাতির সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন। যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত আছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের এই অঙ্গীকারের সাথে শহীদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবে। ইহা বিশেষ আনন্দের ব্যাপার যে স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন সক্রিয় যোদ্ধা সভাপতি থাকাকালেই বাংলাদেশকে এই পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করিয়া নেওয়া হইয়াছে। জনাব সভাপতি, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির শীর্ষসম্মেলনের সাফল্যের ব্যাপারে আপনাদের মূল্যবান অবদানের কথা আমি স্মরণ করিতেছি।…..
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম হইতেছে সার্বিক অর্থে শান্তি এবং ন্যায়ের সংগ্রাম আর সেই জন্যই জন্মলগ্ন হইতেই বাংলাদেশ বিশ্বের নিপীড়িত জনতার পার্শ্বে দাঁড়াইয়া আসিতেছে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পরে এই ২৫ বৎসরের অভিজ্ঞতা হইতে দেখা যায় যে, এইসব নীতিমালার বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কি তীব্র সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইতেছে। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার লক্ষ লক্ষ বীর যোদ্ধার চরম আত্মদানের মাধ্যমে শুধুমাত্র জাতিসংঘ সনদ স্বীকৃত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার পুনরুদ্ধার সম্ভব।
আগ্রাসনের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ভূখণ্ড দখল, জনগণের অধিকার হরণের জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার এবং জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রহিয়াছে। আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং গিনিবিসাউ এই সংগ্রামে বিরাট বিজয় অর্জন করিয়াছে…..
বাংলাদেশের এই মহান স্থপতির এই দিনটির ভাষণের একটি ঐতিহাসিক মূল্য আছে। আমরা আশা করবো তার এই অবদানকে বাংলা ভাষা প্রসারে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে যেনো চিহ্নিত করা হয়। শুধু বৈশ্বিক রাজনৈতিকমণ্ডলে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের জন্য এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে সরকারে সংশ্লিষ্টমহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই আমরা।