স্বৈরাচার এরশাদের পতন ত্বরান্বিত ও গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয় ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর। এদিনই তিনটি জোট ঐক্যবদ্ধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রতিষ্ঠা। এরশাদের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তার অবসান। ১৯৮৭ সালে লড়াকু নূর হোসেন আত্মাহুতি দেওয়ার আগে বুকে-পিঠে লিখেছিলেন, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’।
এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক টেবিলে বসে আন্দোলনের ছক আঁকেন। সঙ্গে থাকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
১৯ নভেম্বর ৩ জোট স্বৈরাচারের পতন এবং পরবর্তীকালে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রূপরেখা প্রকাশ করে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র সুশাসন এবং দেশে একটি সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিষ্ঠা। স্বৈরাচারের ক্ষতগুলো সমাজ থেকে মুছে ফেলা।
ভোটারবিহীন নির্বাচন ও জবরদস্তি করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন এরশাদ। সে কারণে তিন জোটের রূপরেখায় রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
তিন জোটের রূপরেখায় রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা, তথা ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা না করার কথা বলা হয়েছিল।
তিন জোটের রূপরেখায় রাষ্ট্রীয় বেতার-টিভিতে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথা ছিল। সামরিক শাসনামলে টেলিভিশন ‘সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল।
আন্দোলনরত তিন জোট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ৮ দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল ও বামপন্থী ৫-দলীয় জোট গণতন্ত্র উত্তরণে যে রূপরেখা দিয়েছিল, তা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দলিল হয়ে আছে। এই দলিলে হত্যা, অভ্যুত্থান, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ‘সার্বভৌম সংসদ’ প্রতিষ্ঠা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন রহিত করার কথা বলা হয়েছিল। আর তিন জোট ঘোষিত আচরণবিধিতে ‘স্বৈরাচারের চিহ্নিত সহযোগী ও অস্ত্রধারীদের’ দলে না নেওয়ার অঙ্গীকার ছিল।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)