পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের কাছে নিহত এক জঙ্গির মৃতদেহ তার পরিবার গ্রহণ করেনি। এমন কি ছেলেটির জানাজা পড়তেও কেউ হাজির হয়নি। অন্য একটি খবরে দেখেছি গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী জঙ্গিদের লাশ মর্গে থাকার পর মৃতদেহগুলো আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে বেওয়ারিশ লাশ হয়ে চলে যাবে। সর্বশেষ কল্যাণপুরের নিহত এক জঙ্গির পিতা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তিনিও তার পুত্রের লাশ গ্রহণ করবেন না।
যারা ধর্মের নামে নিরীহ লোকদের হত্যা করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত তারা বেওয়ারিশ লাশ হয়ে যাচ্ছে আর যেই লোকগুলোকে ধর্মের নামে হত্যা করা হচ্ছে তাদের কেউ পাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্মান, কেউ অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকছে আবার এক দলের লাশ নিতে বিশেষ প্লেন আসছে বাংলাদেশে। একেই বলে পরিণতি। এতদিন জেনে এসেছি জানাজার খবর শোনামাত্র জানাজায় সমবেত হওয়া মুসলমানদের কর্তব্য।
চোর কিংবা মাতালের লাশ কাঁধে নিয়ে মানুষ মসজিদে যায়। সুদখোর, ঘুষখোরের লাশ তো প্রতিদিনই যাচ্ছে। এরপরও যদি আত্মীয় স্বজন কোন বিশেষ কারণে মৃত ব্যক্তির লাশ নিতে হাজির না হয় তাহলে বুঝতে হবে নতুন একটি প্রথা চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে। প্রথাটি হল ঘরের ছেলে (কিংবা মেয়ে) মৃত্যুর পর ঘরে ফেরার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে শুধুমাত্র জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য।
যে সমস্ত জঙ্গি মনে করেছিল তারা যুদ্ধের মধ্যে আছে তাই মানুষ হত্যা অপরাধ নয়। তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়; সাধারণত যুদ্ধ হয় দুই পক্ষের মধ্যে তোমরা যদি যুদ্ধে নিয়োজিত তবে অন্য পক্ষ কোথায়? তোমাদের শত্রুপক্ষ কি অস্ত্রধারী, তোমাদের মধ্যে কেউ কি অচেনা অজানা নিরস্ত্র মানুষ দ্বারা হত্যার শিকার হচ্ছ? তাই যদি না হবে তবে, নিরীহ নারী পুরুষদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করার অপরাধে তোমাদের পরিবার লাশ গ্রহণ না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা কি খুব অযৌক্তিক?
যেহেতু আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার ফসল। তাহলে কি এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, মানব শরীরে একটি কোপ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার উপর কোপ। জন্ম যদি আল্লাহর ইচ্ছাতে ঘটে মৃত্যুটাও তাঁর ইচ্ছাতে হবার কথা নয় কি? মানুষের বেঁচে থাকা না থাকা কারো দয়ার উপর নির্ভর কারার কথা না। এতোটুকু মানতে না পারলে জঙ্গিদের পরিবার যে কঠোরতা প্রদর্শন করছে তাতে সাধারণ মানুষ কেন হতাশ হবে?
লক্ষ্য করে দেখুন, বিজ্ঞাপন দিয়ে মেসেজ ছড়াতে গেলে লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায় তার বদলে কিছু জীবনের বিনিময়ে গুলশান ক্যাফেতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে একটি মেসেজ ছড়িয়ে দেয়া হল। সেই মেসেজটি হল; মুসলমান হলে হিজাব পর না কেন, মুসলমান হলে সুরা জানো না কেন?
এতোটুকু বার্তা পৌঁছে দেবার জন্য কতগুলো তরতাজা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে পাঠানো হল। এর পূর্বে বাংলাদেশের মানুষকে কিন্তু এই দুটি কারণ দেখিয়ে কখনো খুন করা হয় নি। এবার এটাও শুরু হল। আল্লাহ হাতে প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ ভাল কাজের পুরস্কার পাবে আর মন্দ কাজের জন্য শান্তি। এটাই ইসলাম ধর্মের কথা। শাস্তি কিংবা পুরস্কার নির্ধারণ করবেন যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ।
আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা কারো সাথে ভাগাভাগি করেন নি। “যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু; যিনি বিচার দিনের মালিক” তাঁর কাজে হাত বসানো মানে “লা শরিক আল্লাহ” বিশ্বাস থেকে দূরে চলে যাওয়া।
জঙ্গিদের হাতে যাদের জীবন চলে যাচ্ছে তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে হয়, এই হত্যায় তারা কতটুকু ক্ষুব্ধ। ওরা চলে যাবার আগে যদি কিছু বলে যেত তাহলে জঙ্গিদের নিয়ে আজ ভিন্ন ভাবে ভাবা যেত। আমরা বেঁচে থেকে শুধু চেঁচামেচি করছি। একদল অবৈধ মৃত্যুর বিপক্ষে বলছে, অন্যদল নিভৃতে জঙ্গিবাদের পক্ষে। নিজস্ব এবং দলীয় চিন্তাভাবনা থেকে কেউ এক চুলও নড়ছে না। যারা বলছে হত্যা সঠিক হয়েছে তারাও বেশি কিছু বলছে না কিংবা এই অবস্থায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। আর যারা বলছে নিরীহ মানুষের জীবননাশ মেনে নেয়া যায় না, এ ধরনের মৃত্যু ধর্ম সায় দেয় না। তারাও এর বাইরে এগুতে পারছে না।
ধর্ম হত্যাকে সায় দেয় না এপর্যন্ত গত দশ বছর থেকে শুনে আসছি কিন্তু এর বাইরে নতুন কিছু শুনতে পাচ্ছি না। ধর্ম হত্যা করতে বলে না এটা শোনার পরও জঙ্গিরা ধর্মের নামে হত্যা করছে বা ওরা থেমে থাকছে না কেন? নিশ্চয় জঙ্গিদের এর উল্টো কিছু শোনানো হচ্ছে এবং সেটাই তারা বিশ্বাস করছে। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সমর্থন করে না, এর বিপরীতে ইসলাম ধর্ম হত্যা করতে অনুমতি দিয়েছে এই পক্ষ উল্লেখযোগ্য ভাবে জয়ী হচ্ছে। কেননা যারা জঙ্গি তাদের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে, শিক্ষিত অশিক্ষিত ছেলে মেয়েরা সেই দলেই যোগ দিচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্র আর ইংরেজি পড়া ছত্রদের মাঝে ঐক্য গড়ে উঠছে শুধু মানুষ হত্যার উদ্দেশ্যে।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) জীবন দশায় কিছু যুদ্ধ করেছিলেন। জঙ্গিরা এখন সেই যুদ্ধের হারানো নিয়ম নীতি মুখস্থ করে মাঠে নেমেছে। যুদ্ধ জয়ের জন্য হযরত মোহাম্মদ (সঃ) যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন বা অন্যদের করতে বলেছিলেন সেটা ছিল শুধুই যুদ্ধকালীন নির্দেশ। সব দেশে সব যুদ্ধের একই নিয়ম। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাজে বা যুদ্ধের বাইরে সেই নির্দেশ পালন করার কোন অধিকার নাই।
যুদ্ধ মানে সরাসরি ঢাল তলোয়ার গোলাবারুদ নিয়ে লিপ্ত থাকা। ঘোড়ার পিঠে কিংবা ট্যাঙ্কের উপর বসে শত্রুকে আক্রমণ করা। আমরা জানি জঙ্গিদের বলা হচ্ছে ধর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করা যায়। এই ধারাবাহিকতায় জঙ্গিদের বলা হচ্ছে বহু আগে সংঘটিত যুদ্ধকালীন কৌশল বর্তমান সমাজে ব্যবহার করা জায়েজ। কথা প্রসঙ্গে বলতে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রশিক্ষণ নেয়া যোদ্ধারা জানতো কি করে নিজ দেহ গাছের আড়ালে নিয়ে শত্রুর উপর গুলি ছুড়তে হয়, কি করে বেয়োনেট চার্জ করতে হত শত্রুর বুকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখানো যুদ্ধ কৌশল এখন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ, সেটা আইন বিরোধী।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণ কারার পর শত্রুপক্ষের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল মিত্র পক্ষকেই। তাই আইনের বৈধতা না নিয়ে আত্মসমর্পণ করার কিছুদিন পর বেয়োনেটের আঘাতে ঢাকার রাজপথে যে কজন রাজাকারকে হত্যা করা হয়েছিল সেটা আজো সমালোচিত। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিল, পাকিস্তানী সৈন্যদের যারা সাহায্য করেছিল কিংবা মুক্তিবাহিনীকে আঘাত করতে চাইতো, মুক্তিবাহিনীদের চোখে তারা সবাই ছিল শত্রু। আজও অনেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার, পাকিস্তানীদের পক্ষে কিংবা মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলে। সে কারণে অনেকের বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয় নি। তাই এখনো যারা ধর্ম যুদ্ধে বিশ্বাস করে তারা কিন্তু নৈতিক ভাবে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধ চালু হলে কিছু বলতে পারবে না। হাজার বছর আগে সমাপ্ত হওয়া যুদ্ধকে অসমাপ্ত ভাবতে পারলে মাত্র ৪৫ বছর আগের যুদ্ধকে কেন অসমাপ্ত ভাবা যাবে না!
জঙ্গিদের অনুরোধ করবো এখন থেকে গ্রীষ্মকালের ওয়াজ শীতকালে না করে ধর্মের যে সমস্ত বাণী মানব কল্যাণের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো জানতে চেষ্টা করা। মূল কথা হল ধর্মের যুদ্ধ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এ যুগে যুদ্ধ করে কাউকে ধর্মের দিকে টেনে আনা যাবে না। এখন আর কেউ গোত্র বা ট্রাইবের মধ্যে বাস করে না। বর্তমান যুগ রাষ্ট্র এবং নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার যুগ। যার অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র এবং নাগরিক দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এদের ভেদ করা খুব সহজ কাজ নয়। ধর্মের উপকার করতে গিয়ে যদি এক বিন্দুও ধর্মের ক্ষতি করা হয় তাতে আত্মতৃপ্তি পাবার কোন কারণ নেই।
অন্যদিকে আমাদেরও উচিৎ ধর্মের মূল কথা দশ হাত না ঘুরিয়ে নিজ জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করা। জন্ম মৃত্যুর সাথে ধর্ম ভীষণ ভাবে জড়িত। তাই ধর্মকে ফাস্ট হ্যান্ড জানাও সকলের দায়িত্ব। কোন কিছু না জেনে গ্রহণ করা কিংবা বর্জন করা দুটোর কোনটাই কাম্য হওয়া উচিৎ নয়। যা করবো জেনে করাটাই উত্তম। যারা একটা উপন্যাস মুখস্থ করে অন্য উপন্যাসের দিকে হাত বাড়ান অথচ ধর্মের এক পাতাও পড়ে দেখেন নি সেই সমস্ত শিক্ষিত মানুষ মনের অজান্তে সুযোগ করে দিয়েছেন বর্তমান যুগের ধর্ম ব্যবসা এবং ধর্ম যুদ্ধকে।
আঙিনার একাংশের জমি দখলে না থাকলে সেখানে অন্য কেউ এসে চাষ করবে এটাই স্বাভাবিক। অথবা মূল্যবান একটি গাড়ি অবহেলায় অযত্নে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে কেউ না কেউ সেটাকে চুরি করার জন্য হাত বাড়াবে। ধর্ম শুধু মওলানা মাদ্রাসার ছাত্ররা জানবে আর সাধারণ মানুষ কবিতা গল্প পড়বে এটাই যদি স্বাভাবিক নিয়ম হয় তাহলে দোষ কি ওই জঙ্গিদের একার ঘাড়ে চাপানো যাবে?
আমরা ছেড়ে দিয়েছি বলেই কি ওরা পুরোটা দখল করে নেয় নি? আমাদের কেন অতোটুকু জ্ঞান নেই যা দিয়ে ওদের অজ্ঞানতাকে চ্যালেঞ্জ করা যেত। ধর্মের ব্যাপারে আমরা কেন এতোটাই অশিক্ষিত যে যাকে মনে করা হয় অশিক্ষিত তার ধর্ম বক্তব্যই মেনে নিতে হয়। বাস্তবতা হল আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছি সেখানে আমাদের ঠেলে আনা হয়েছে দলবদ্ধ ভাবে। আমারাও দলবদ্ধ হয়ে দূরে সরে গেছি। বিশ-ত্রিশ বছর আগ থেকে আমাদের নড়াচড়া শুরু হয়েছিল। তখন বুঝতে পারি নি যে আমরা সরে যাচ্ছি। বুঝতে পারি নি যে আমাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের চাবি চলে যাচ্ছে অন্যের হাতে। এখন যখন বুঝতে চাইছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আজ মগজ-ধোলাই এর কথা শোনা যাচ্ছে। এই ধোলাই পর্ব অনেক দীর্ঘ। অনেক তত্ত্ব তথ্য রয়েছে সেখানে। শুধু এইটুকুই বলবো, নজরুল সংগীতের সুরে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা মাত্রই আমরা প্রতীবাদ করেছি, সেই গান না শুনে উঠে দাঁড়িয়েছি অথচ ধর্মের ব্যাপারে দাঁড়াতে আমরা ভুলে গেছি। ধর্মের বেসুরকে আমারা অবহেলা করেছি। তাই বুজতে অসুবিধা হচ্ছে না জঙ্গিরা কি ভাবে খালি মাঠ পেয়ে গেল। একটি বা দুটি কারণে জঙ্গিবাদের উত্থান হয় নি এ কথা সত্য, তবুও বলবো নিজের উপর আমরা দোষ নিতে চাই না। আমরা সকলেই কিছু না কিছু দোষ করেছি বলেই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এমন একটা সম্পর্ক নেই, এমন একটা বস্তু নেই, এমন একটা ধারণা নেই যা অবহেলা করলে হারিয়ে যায় না।
ধর্ম মোল্লা মৌলবিদের ব্যাপার মনে করে আমরা ধর্ম শিক্ষাকে অবহেলা করেছি। পালন করা না করা পরের কথা। বলছি যতোটুকু সম্ভব ছিল জানার ততোটুকু চেষ্টা করি নি বলেই হয়তো আমাদের কিছু কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে সত্য-মিথ্যা, আলো-আধার নিয়ে যখন কথা বলার দরকার ছিল তখন আমরা নির্বাক থেকেছি। ওদের আচরণ লক্ষ্য করে প্রথমে পারিবারিক পরিবেশে আমরা যুক্তি তর্কে যেতে পারতাম কিন্তু কি করে যাবো?
তারপর না হয় সামাজিক ও সাংগঠনিক সাহায্য নেয়া যেত। আমরা যে জানি না সেটা ওরাও জেনে গেছে, তাই আমাদের স্নেহের কান্না গ্রহণযোগ্যতা পায় নি ওদের কাছে। সমাজের জ্ঞানী ব্যক্তিরা হয়তো আলো অন্ধকার নিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন কিন্তু যুব জঙ্গি সমাজ তাঁদের কথা শুনেতে আগ্রহী নয়। যারা ওদের বিপথে টেনে আনছে ওরা তাদের কথাই শুনছে। পরিণামে এখন তাদেরই লাশ বেওয়ারিশ হয়ে যাচ্ছে, আপনজনেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ এক নতুন বাংলাদেশে।