এক
ছোটবেলায় পুরান ঢাকার চিপা চাপা গলি ঘিঞ্জিতে আমরা পোঙটা পোলাপাইনের দল সকাল নেই, দুপুর নেই, বিকাল নেই মনের ফুর্তিতে ইটার টুকরা-মুকরা কোনো রকমে একটার ওপর একটা জোড়া দিয়ে উইকেট বানিয়ে মনের আনন্দে দেদারসে ক্রিকেট খেলতাম।
ঐ সময় ক্রিকেট খেলায় না ব্যাটিং না বোলিং কোনটাতেই আমি খুব একটা ভালো ছিলাম না। তারপরও মহল্লার বন্ধু কিংবা বড় ভাই-বেরাদররা যখন খেলার আয়োজন করত তখন আমার মধ্যে কাজ করত সীমাহীন আগ্রহ আর উৎসাহ। আমাকে দলে ভেড়ানোর জন্য দুই দলের ভেতর ‘কুস্তাকুস্তি’ ধরনের উত্তেজনায় আমি মনে মনে বিগলিত হইতাম আর ভাবতাম, আহা! আমি যেন কত না ভালো একখান খেলোয়াড়!
সারা খেলায় আমি না ব্যাটিং না বোলিং কোনো কিছুতেই তেমন সাফল্য দেখাতে না পারলেও মনের আনন্দে খেলা জুড়ে বেকার খাটতে পারতাম। খেলার মধ্যে বল সীমানার বাইরে চলে গেল তো আমি সুপারম্যানের মতো গিয়ে সেই বল খুঁজে পেতে নিয়ে আসতাম। বল রাস্তার পাশের ময়লা পানির বড় ড্রেনে গিয়ে পড়লে কেউ তুলতে চাইত না আমি তখন আবাবিল পাখির মতো উড়ে গিয়ে ঝপ করে সেই বল নিয়ে আসতাম।
কেউ হয়ত এমন জান পরাণ উজার করে শরীরের সমস্ত শক্তিতে ছক্কা মারল যে বলের কোনো হদিসই কেউ দিতে পারল না। কই গেল বল- কই গেল বল।
বলের অভাবে যখন সবাই খেলা গুটিয়ে নেয় নেয় অবস্থা তখন আমি কিন্তু ঠিকই খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসতাম সেই বল। বলে পেয়ে সবাই খুশি।
পুরো খেলা জুড়ে আমার একমাত্র কাজ ছিল বীর বিক্রমে ‘বেগার খাটা’ আর আকামের কামে দৌড়াদৌড়ি করা।
আমার ওরকম ‘বেক্কইল্যা পারফর্মেন্স’ এ দলের অন্যান্যরা নির্মল আনন্দ উপভোগ করত। আমিও তাই ভাবতাম। কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে মাঝে মাঝে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ কেউ সেই সময়ে আমাকে উপদেশ দিয়ে বলত,
‘ আরে ব্যাটা বেক্কল, একটু চালাক চতুর হ নাইলে তো জীবনে মারা পড়বি…’
দুই
বয়স হয়েছে ঢের।
ক্রিকেট খেলায় ছোটবেলার সেই অসাধারণ ‘বেক্কইলা পারফর্মেন্স’ আমি এখনো নিষ্ঠার সঙ্গে ধরে রেখেছি…