ছেলে পাবার আশায় একের পর এক সন্তান জন্ম দিতে থাকার কারণে ভারতে জন্ম নিয়েছে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ‘অবাঞ্ছিত’ কন্যাশিশু। ভারত সরকারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় পরিচালিত বার্ষিক অর্থনৈতিক জরিপ প্রতিবেদন থেকে বিবিসি জানায়, ভারতে এমন অনেক দম্পতি আছে, যারা যতদিন পর্যন্ত ছেলে সন্তান পায়নি, ততদিন পর্যন্ত সন্তান জন্ম দিয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের আদমশুমারিতে প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ নারীর কোনো হিসেবই নেই। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দম্পতিরা যখন আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখেছে মায়ের গর্ভে থাকা সন্তানটি ছেলে নয়, মেয়ে, তখনই গর্ভপাত করানো হয়েছে অথবা পরে পুত্র সন্তানের প্রতি বেশি নজর দেয়া হয়েছে। আর এ কারণে মেয়ে শিশুগুলো ছেলে সন্তাদের তুলনায় পায় কম পুষ্টি, যত্ন এবং শিক্ষার সুযোগ।
গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা ভারতীয় আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরেও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চলছে এই পরীক্ষা। আর পরীক্ষায় গর্ভের শিশুটি মেয়ে, এটা জানার পর হত্যা করা হয় কন্যাশিশুর ভ্রুণ।
ভারতে কন্যাশিশুর প্রতি অনাগ্রহের বেশ কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। যেমন সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টি। আইনত পাবার কথা থাকলেও ভারতে মেয়েরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। মেয়েদের বিয়ের সময় মোটা অংকের অর্থ যৌতুক হিসেবে দিয়ে দিতে হয়। আবার বিয়ের পর মেয়েদের পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়িতে চলে যেতে হয়। এসব কারণে দেশটিতে বেশিরভাগ পরিবার ছেলে শিশু পেতে ব্যাকুল থাকে।
এমনকি কীভাবে পুত্র সন্তান লাভ সম্ভব, এমন কিছু কর্মকাণ্ডের বিশ্বাসও চালু রয়েছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে। ছেলে শিশুকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যে। মেঘালয় এই তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে। তবে সার্বিকভাবে পুরো ভারত জুড়েই এই ‘পুত্র-আকাঙ্খা’ সমস্যাটি ব্যাপক। আর এ কারণেই ভারতের জনসংখ্যায় নারী-পুরুষের সংখ্যায় বৈষম্য চোখে পড়ার মতো।
এমনকি পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো সম্পদশালী রাজ্যগুলোতে বিয়ের জন্য নারীর অভাব দেখা দিয়েছে। রাজ্য দু’টিতে এ বছরের জরিপ অনুসারে, শূন্য থেকে ৬ বছরের শিশুর মধ্যে ১২শ’ ছেলে শিশুর বিপরীতে মেয়ে শিশু আছে মাত্র ১ হাজার।